মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণায় স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনগুলোতে সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারাবে ভাবা হলেও তেমনটি হচ্ছে না। ৫ সিটি নির্বাচনের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া গাজীপুর সিটি নির্বাচন ঘিরে দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ ছিল। অন্য সিটির নির্বাচগুলোতে আছে উৎসবের আমেজ। এছাড়া সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ওরফে নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে সাধারণের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। ক্ষমতার তিন মেয়াদে স্থানীয় কাউকে এ আসনে প্রতিনিধি হিসেবে না পাওয়ার হতাশা রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। সে কারণে এবার স্থানীয় নেতাদের মনোনয়নের পক্ষে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এদিকে ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের নির্বাচনের মাঠে নামার ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আর বিনোদন জগতের অনেকে ফারুকের উত্তরসূরি হওয়ার আগ্রহ দেখানোয় এনিয়ে জনমনে কৌতূহল বাড়ছে। গত ১৫ মে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ১ জুন এই আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিল ১৫ জুন, বাছাই ১৮ জুন ও প্রত্যাহার ২৫ জুন। আগামী ১৭ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফারুকের মৃত্যুর পরেই এই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ইচ্ছার কথা জানান দেন। আর তফসির ঘোষণার পরে গণমাধ্যমে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান অনেকে। এরই মধ্যে মনোনয়নের আলোচনায় উঠে এসেছে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও চিত্রজগতের তারকাদের নাম। আলোচনায় থাকা অন্যতমদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শাম্স পরশ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দুই সহ-সভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন ও কাদের খান। বিনোদন জগতের তারকাদের মধ্যে অনেকের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও নাট্যকার-অভিনেতা-নির্মাতা সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। আর আলোচনার সর্বশেষ সংযোজন ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। গত শনিবার থেকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। প্রথম দিনে ফরম সংগ্রহ করেছেন সাতজন। মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এই ভিআইপি আসনে নির্বাচন করার জন্য স্থানীয় কোনো নেতা সুযোগ পায়নি। ২০০৮ সালে ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচন করেন জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। মহাজোটের স্বার্থে এরশাদকে আসনটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালে বিএনএফ নামে একটি দলের প্রধান আবুল কালাম আজাদ এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। সেইবার আওয়ামী লীগ এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। সবশেষ নির্বাচনে প্রয়াত চিত্রনায়ক ফারুক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ১৭ আসনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় নেতা বাছাইয়ের চাপ বাড়ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। স্থানীয় পর্যায়ে দাবি উঠেছে, এই আসনে বহিরাগতদের মনোনয়ন না দিয়ে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকে নৌকার টিকিটি দেওয়ার। টানা তিন মেযাদের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাহিরাগত জনপ্রতিনিধি থাকায় দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ একরকম অভিভাবকহীন ছিলেন। স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিদের কাছে যাওয়ার সুযোগও পাননি। সঙ্গত কারণে এবার স্থানীয় নেতার হাতে নৌকার প্রতীক দেখতে চাচ্ছে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। আলোচনায় থাকা স্থানীয় পর্যায়ের দুই নেতা ওয়াকিল উদ্দিন ও কাদের খানের অনুসারীরা রীতিমতো গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। প্রায় প্রতিটি মোড়ে শোভা পাচ্ছে এই দুই নেতার ছবি সংবলিত শুভেচ্ছা পোস্টার। সংবাদ মাধ্যমে দলের মনোনয়ন পাওয়ার আশা কথা জানিয়েছেন দুই নেতাই। এ বিষয়ে ওয়াকিল উদ্দিন বলেন, ‘পরপর তিনবার চেষ্টা করেও মনোনয়ন পাইনি। এরপরও রাজপথে ও সামাজিক নানা দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবার দল মূল্যায়ন করবে বলে আশা করি। কাদের খান বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে ভোটারদের সঙ্গে আমার যোগাযোগটা বেশি। তাই এবার আমি মনোনয়ন আশা করছি।’ এদিকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম সোমবার ঢাকার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। জানিয়েছেন, নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে তার অনেক উন্নয়ন কাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে। তিনি সেসব কাজ সমাপ্ত করতে চান। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেন হিরো আলম। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বগুড়া-৪ আসনে একতারা প্রতীকে ৮৩৪ ভোট কম পেয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে হারেন তিনি। আর বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসানের কাছে হারের পাশাপাাশি জামানত হারান হিরো আলম।