প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, অতিরিক্ত গরম আর কয়েকদিন ধরে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে (লোডশেডিং) দেশজুড়ে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে। এদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া-আমাশয়-জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। বিশেষ করে শ্রমজীবী, শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশসহ (আইসিডিডিআর,বি) একাধিক হাসপাতালে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়লেও তারা এটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে ব্যাপক জনসচেতনতা প্রয়োজন। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণত মার্চ থেকে গরম শুরু হওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। এ সময় রোগটির চিকিৎসায় বিশেষায়িত এ হাসপাতালটিতে রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। গত বছর মার্চ-এপ্রিলে দৈনিক গড়ে ৭০০ থেকে হাজারের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ওইসময় একদিনে সর্বোচ্চ ১৩৭৫ রোগী এসেছিল। শয্যা সংকটে হাসপাতালের আঙিনায় তাবু টানিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়েছিল। এবার মে মাসের শেষদিকে রোগী বাড়া শুরু হলেও গত বছরের তুলনায় কম। তবে কয়েকদিনের অসহনীয় গরমে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ রোগী আসছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন, প্রচণ্ড গরম, রোটা ভাইরাস ও ফুড পয়জনিংয়ের কারণে শিশুদের ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে অ্যালার্মিং পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। অনেক শিশুকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে আইসিডিডিআর,বিতে রেফার করা হচ্ছে। রোগীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে, বেশি বেশি তরল ও খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক বাহারুল আলম বলেন, আইসিডিডিআর,বিতে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসাকে স্বাভাবিক হিসাবে ধরা হয়। সোমবার ৬৭৬, মঙ্গলবার ৬৩২ এবং বুধবার ৭৭৭ জন ডায়রিয়া রোগী এসেছে। বর্তমানে আইসিডিডিআর,বিতে আসা ৬০ শতাংশ রোগীর বয়স পাঁচ বছরের নিচে। বাকি ৪০ ভাগের বয়স পাঁচ বছরের ওপরে। যাদের বেশির ভাগই তীব্র পানিশূন্যতা নিয়ে আসছে। গরমে সুরক্ষিত থাকতে প্রয়োজন সুপেয় পানি। দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেই পানি অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়েই অনেক মানুষ রাস্তার পাশের ময়লাযুক্ত পানি পান করে। ইমিরিটাস অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রাস্তায় কাজ করা অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়েই রাস্তাঘাটে অস্বাস্থ্যকর শরবত ও পানি খান। যে কারণে হাসপাতালগুলোয় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিসসহ এ ধরনের রোগীও প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। এ সময়ে যারা বিভিন্ন শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত, তাদেরও শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ হাঁপানি দেখা যাচ্ছে। যারা গরমে বাইরে গিয়ে কাজ করবেন, তাদের দুই ঘণ্টা পরপর ছায়ায় বসে ১৫-২০ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিতে হবে। গরমে শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যায়। এজন্য প্রচুর পানি, লবণমিশ্রিত পানি, ওরস্যালাইন, ডাব খেতে হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সূত্র জানিয়েছে, গরমে খাবার অনেকক্ষণ ভালো থাকে না। যে কারণে খাবারে অল্পপরিমাণ জীবাণু থাকলেও সেটি এ গরমে তা অনেক বেড়ে যায়, যা খেলে ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং লবণ বেরিয়ে যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টি রোগীর অভিভাবকরা গুরুত্বের সঙ্গে নেন না। যতবার পাতলা পায়খানা হবে, ততবার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। বাজারে এক টাকায় একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ফিটকিরি পাওয়া যায়।