পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন, কংগ্রেস-বিজেপি নেতাদের মারধর

প্রকাশিতঃ জুন ১৩, ২০২৩ | ৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় সোমবার সারাদিনই মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে শুরু হয় তুমুল গণ্ডগোল। কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএমের কোনো নেতাকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন তৃণমূল দলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, বিডিও অফিসের ১০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। মনোনয়নপত্র যাতে নির্বিঘ্নে জমা দেওয়া যায়, তাই এ সিদ্ধান্ত। কিন্তু মনোনয়নপত্র পেশ করা শুরু হতেই দেখা গেল অন্য ছবি। এদিকে ৮ জুলাইর বদলে পঞ্চায়েত ভোট ১৪ জুলাইয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি চায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথাও রয়েছে প্রস্তাবে। টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা। জেলায় জেলায় বিডিও অফিসের ভেতরে বিরোধীদের মারধর, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটল। বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কোথাও মোটরসাইকেল বাহিনী নিয়ে গোলমাল করা হয়েছে, কোথাও বাঁশ নিয়ে হাঙ্গামা হয়েছে, কোথাও বিডিও অফিসে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে, কোথাও প্রার্থীদের নথি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রার্থীকে ধরে মারা হয়েছে। আর এসবই ধরা পড়েছে টেলিভিশন ক্যামেরায়। পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে বড় সংঘর্ষ হয়। বড়শূলে সিপিএম প্রার্থীরা একজোট হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তৃণমূলের অসংখ্য কর্মী বাঁশ নিয়ে আগে থেকে প্রস্তুত ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতিতে শুরু হয় মারধর। কিছুক্ষণ পর গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাথর ছোড়া হয়। তিনজন আহত হয়ে যায় হাসপাতালে। কাকদ্বীপে বিডিও অফিসে ঢুকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে কংগ্রেস প্রার্থীকে বাধা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কর্মীরা তাদের নথি কেড়ে নেন। সকাল থেকেই কাকদ্বীপে উত্তেজনা ছিল। কংগ্রেস প্রার্থী শিবানী দাসকে বিডিও অফিস চত্বরেই বাধা দেওয়া হয়। তার মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। তারপর বিজেপি কর্মীদের রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ভাঙড়েও কংগ্রেস প্রার্থীকে বিডিও অফিসের মধ্যেই মারধর করা হয়। কংগ্রেস প্রার্থী আশরাফ আলী মোল্লার অভিযোগ, প্রথমে তৃণমূলের কর্মীরা তাকে বাধা দেন। তারপর পুলিশের সাহায্যে বিডিও অফিসে ঢুকলে তাকে মারধর করা হয়। জামুড়িয়াতে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়া হয়। মারা হয়। বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীদের আটকে দেওয়া হয় এবং মারধর করে সব কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির অভিযোগ, পুরোটাই করা হয় পুলিশের সামনে। বাঁকুড়ার সোনামুখীতে বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামিকে তিনবার হেনস্তা করে তৃণমূল কর্মীরা। ফলে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। মাথা ফেটেছে এক বিজেপি প্রার্থীর। এর প্রতিবাদে সংসদ-সদস্য সৌমিত্র খাঁ সড়ক অবরোধ করেন। মিনিখাঁতে তো তৃণমূল কর্মীরা সিপিএমের পার্টি অফিস ঘিরে রাখেন। ফলে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বেরোতেই পারেননি প্রার্থীরা। বেশ কিছু বাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। সিপিএমের নেতাদের মারা হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্র বলেছেন, তৃণমূলের গুন্ডারা তাদের কর্মীদের বাইক নিয়ে পালিয়েছে। পার্টি অফিসের ভেতরে ঢুকে মারধর করেছে। সবই হয়েছে পুলিশের সামনে। বীরভূমের কীর্ণাহারে বিডিও অফিসে যাওয়ার পথে বিরোধী প্রার্থীদের মারধর করা হয়। জামুড়িয়ায় বিজেপি প্রার্থীকে মারধর করা হয়। মুর্শিবাদাদের ডোমকলে ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। পান্ডুয়ায় বিজেপি সংসদ-সদস্য লকেট চট্টোপাধ্যায়কে বিডিও অফিসে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশের সামনে। মনোনয়নপত্র পেশ করার বিষয়টি দেখার জন্য তিনি বিডিও অফিসে ঢুকতে যাচ্ছিলেন। পুলিশ যেতে দেয়নি। লকেটের প্রশ্ন, নিজের এলাকায় জনপ্রতিনিধিকে ঢুকতে দেবে না পুলিশ? আদালতে শুনানি: কলকাতা হাইকোর্টেও এদিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন বাড়ানো নিয়ে এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে শুনানি হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে জানানো হয়েছে, ৯ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তা একদিন বাড়িয়ে ১৬ জুন পর্যন্ত করা যেতে পারে। প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, তাহলে পঞ্চায়েত ভোট ১৪ জুলাই করতে হয়। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তিনি স্পর্শকাতর ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করার কথা বলেন।