ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়

প্রকাশিতঃ জুন ১৩, ২০২৩ | ৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর ও ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত নয়। ব্যাংক ঋণের ৫ বা ১০ শতাংশ জমা দিয়ে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ কোনোভাবেই থাকা উচিত নয়। রাজনীতিতে এই অঙ্গীকার থাকা প্রয়োজন। সেটি না হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্ভব হবে না। এছাড়া আগামী বাজেটে চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো- সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, রাজস্ব সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, বাজেট ঘাটতি পূরণে বিচক্ষণভাবে অর্থায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় বাড়ানো। আর প্রস্তাবিত বাজেটের মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য অর্জন কঠিন হতে পারে। এজন্য এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সোমবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪-এর চারটি বড় চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ। সেমিনারে ড. বিনায়ক সেন বলেন, সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি খানা (পরিবার) আছে। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি খানা কর দেওয়ার যোগ্য। কিন্তু আমাদের দেশে করদাতা অল্প। প্রকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে কর নিলে বাজেটে সবার জন্য ২ হাজার টাকা কর ধার্য করার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর ও ঋণখেলাপিরা যাতে কোনোভাবেই প্রার্থী হতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করা উচিত। এক্ষেত্রে বর্তমানে যে সিস্টেম চালু আছে, সেটি বাদ দেওয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, সেবা পেতে গিয়ে ২ হাজার টাকা করের বিধানের ফলে হয়রানি হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেই সঙ্গে সরকারের ভর্তুকি কাঠামো যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। জিডিপির দুই শতাংশের মতো চলে যাচ্ছে ভর্তুকিতে, যার বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয়। কৃষি, সার ও সামাজিক নিরাপত্তায় ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে; কিন্তু বেসরকারি খাতে ভর্তুকি দেওয়ার অর্থ হয় না। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে যেসব শিল্পে ভর্তুকি আছে, সেগুলো বাদ দেওয়া উচিত। বিনায়ক সেন বলেন, গত এক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এখন মুদ্রার একক ও বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণ করার সময় এসেছে। কারণ, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে। এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১০ বিলিয়ন ডলার। আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে আসছে; কিন্তু এর সঙ্গে দেশের বাজারে দামের সমন্বয় হচ্ছে না। এটা টেকসই নয়, উচিতও নয়। মূল প্রবন্ধে ড. সাদিক আহমেদ বলেন, আগামী অর্থবছরের চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, রাজস্ব সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, বাজেট ঘাটতি পূরণে বিচক্ষণতার সঙ্গে অর্থায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় বজায় রাখা বা আরও সম্প্রসারণ করা। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জরুরি ছিল সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। কিন্তু সরকার তা না করে বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের গভীরতা বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের যে প্রাক্কলন সরকার করেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গত এক বছরে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে। এই মূল্যস্ফীতির দায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সুবিধাজনক। কিন্তু সেটা ঠিক বাস্তবসম্মত নয়। তবে যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ আছে ঠিকই; কিন্তু দেশের বাজারে যথাযথভাবে চাহিদা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যেসব দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাহিদা হ্রাসের ব্যবস্থা নিয়েছে, সেসব দেশ প্রণিধানযোগ্যভাবে মূল্যস্ফীতি হ্রাস করতে পেরেছে। অর্থাৎ যেসব দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, সেসব দেশ ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার কমাতে পেরেছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে থাইল্যান্ডের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪৬ শতাংশ কমেছে। ভারতে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কমার হার ৪০ শতাংশ। ভিয়েতনামের মূল্যস্ফীতি সব সময়ই ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে ছিল। এদিকে বাংলাদেশে গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছর ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে। ড. সাদিক আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রত শেষ হবে, এটা মাথা থেকে বের করে দিতে হবে। ধরে নিতে হবে-এই যুদ্ধ ২০২৫-২৬ সাল পর্যন্ত চলবে। সেটি চিন্তা করেই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসাবে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল বাজেটে। ভর্তুকি আমি বিশ্বাস করি না। এটা কোনো টেকসই পন্থা নয়। কোনো সংকটকালীন এক-দুই মাসের জন্য এটা দিলে ঠিক আছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা কাম্য নয়। অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। জ্বালানি তেলের বিষয়ে তিনি বলেন, সৌদি আরব যা বলেছে, এগুলো নতুন কিছু নয়। বিশ্ববাজারে দাম ওঠানামার মধ্য দিয়েই যাবে। আমাদের ভাবতে হবে- এ পরিস্থিতির ব্যবস্থাপনা কী হবে। এক্ষেত্রে বিপিসি একটি ব্লাকবক্স বা কালো বাস্কে পরিণত হয়েছে। প্রচুর আয় করলেও সরকারকে সেই অনুযায়ী ডিভিডেন্ট দেয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৭ শতাংশের বেশি ধরা হয়েছে। এটি অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বিনিময় হার চেপে ধরে রাখাটা ঠিক হয়নি। এর ফলে রপ্তানি বহুমুখীকরণ হয়নি। আরও নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই এক্সচেঞ্জ রেট বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরকে আধুনিক করতে হবে। অনলাইনে কর দিয়ে আবার কাগজ প্রিন্ট দিয়ে জমা দিলে একই অবস্থা হলো। এক্ষেত্রে করদাতা ও গ্রহীতা যাতে কেউ কাউকে চিনতে না পারে, সেই সিস্টেম আনতে হবে। এছাড়া রিজার্ভ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।