নবাব এস্টেটের কর্মচারীরা লিজ মানির রিসিট বানিয়ে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এরকম ভয়াবহ জালিয়াতি ও দুর্নীতির ঘটনা ধরা পড়েছে ভূমি নিরীক্ষা দপ্তরের তদন্তে। ছয় মাস আগে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দীক বুধবার বলেন, এসব অভিযোগ ও অনিয়মের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। ভূমি নিরীক্ষা দপ্তরের প্রতিবেদনও আমি দেখিনি। এ ধরনের অনিয়ম হওয়ার কথা না। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হবে। অপরদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ডিসেম্বরে নিরীক্ষা প্রতিবেদন পেয়ে বিষয়গুলো নজরে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে ভূমি সংস্কার বোর্ডকে বলা হয়েছে। তদন্ত হয়ে আসুক। এরপর বলা যাবে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমি নিরীক্ষা দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়মানুসারে নির্ধারিত ২নং রেজিস্টারে লিজ নবায়নের টাকার হিসাব রাখার কথা। এই রেজিস্টারে প্রত্যেক লিজ গ্রহীতার জন্য পৃথক হোল্ডিং খুলে লিজির নাম, ঠিকানা, কেস নং, মৌজা নং, খতিয়ান, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, বার্ষিক লিজ মানির পরিমাণ এবং আদায়ের বছরসহ যাবতীয় তথ্য লেখা হয়। এখানে লিজ নবায়ন ও লিজ মানি আদায়সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু এসব নিয়ম অনুসরণ না করে রীতিমতো হাতে তৈরি করা রেজিস্টারে লিজ মানির হিসাব রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত টানা ১০ বছর ভয়াবহ জালিয়াতি ও দুর্নীতি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লিজ মানি আদায়ের রসিদে আদায়কারী মূল কপি ও কার্বন কপিতে হাতে লিখেছেন। অথচ কার্বন কপিতে হাতে লেখার সুযোগ নেই। মূলত এভাবে কারচুপি করে আদায়কৃত প্রকৃত অর্থের পরিমাণ গোপন করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। তদন্ত প্রতিবেদনে এ ধরনের অন্তত ৩০টি প্রমাণ সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। গত ডিসেম্বরে ভূমি নিরীক্ষা দপ্তর থেকে উল্লিখিত অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরীক্ষা প্রতিবেদন ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ডে পাঠানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে নবাব এস্টেটের ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ২৮ জনকে দায়ী করা হয়। তারা হলেন নবাব এস্টেটের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার মো. হাজাঙ্গীর আলম ডিএলআরসি ম্যানেজার মো. শহীদুল্লাহ মজুমদার, ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার সাব্বির হোসেন, ম্যানেজার মো. হেলাল উদ্দীন, ম্যানেজার মো. কেএম করিম আহম্মদ, ম্যানেজার সৈয়দ লোকমান, ম্যানেজার মো. লোকমান আহমেদ, মো. হানিফ ম্যানেজার, সৈয়দ লোকমান আহমেদ ম্যানেজারের অতিরিক্ত দায়িত্ব, সৈয়দ লোকমান আহমেদ, মো. আবু মাসুদ-ডিএলআরসি, সৈয়দ লোকমান আহমেদ, কাজী মেরাজ হোসেন, মো. হোসেন, সিনিয়র সহকারী ম্যানেজার মো. সাব্বির হোসেন, সহকারী ম্যানেজার মো. হাবিবুর রহমান, সহকারী ম্যানেজার মো. ইয়াসির আরাফাত, সহকারী ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুজাউদৌলা, প্রধান সহকারী মো. আলী হোসেন, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আবু হেনা, মো. মাজহারুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, কম্পিউটার অপারেটর কাজী মেজবাহ উদ্দিন, সার্ভেয়ার মো. হোসেন আলী ও মো. শফিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী মো. আব্দুল আজিজ মিয়া ও মো. মিজানুর রহমানের নাম রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্তদের মধ্যে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও মো. আবু হেনা বলেন, ‘আমরা অভিযোগের জবাব দিয়েছি। আমরা নির্দোষ।’ এদিকে এ দুর্নীতি ঠেকাতে ভূমি নিরীক্ষা দপ্তরের সুপারিশে বলা হয়েছে, কালবিলম্ব না করে নিয়মনীতি অনুসরণ করে নবাব এস্টেটের সম্পত্তির ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে। সরকার নির্ধারিত রেজিস্টারে লিজ গ্রহীতার যাবতীয় তথ্য সংযোজন করতে এবং লিজ মানির হিসাব সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে। ভূমি নিরীক্ষা দপ্তরের নিয়ন্ত্রক মো. মশিউর রহমান বলেন, তদন্ত করে আমরা যেসব অনিয়ম পেয়েছি, তা প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ডে পাঠিয়েছি। বিষয়গুলো দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি।