আরব সাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ ভারতের গুজরাট রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হেনেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গুজরাটের ৯৪০ গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে উপড়ে পড়েছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক গাছ, বিঘ্নিত হয়েছে ট্রেন পরিষেবাও। এতে দুজন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন। রাজ্যের ভাবনগর জেলায় নিজেদের ছাগলের পালকে রক্ষা করতে গিয়ে এক পশুপালক ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে। এ ভয়াবহতার কারণে শনিবার পর্যন্ত মাছ ধরাসহ সমুদ্র বন্দরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। জাহাজগুলো নিরাপদ স্থানে নোঙর করে রাখা আছে। গুজরাটের জামনগর বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের চলাচল শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গুজরাটের সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় ‘বিপর্যয়’ আঘাত হানে। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে এটি রাজস্থানে উপস্থিত হওয়ার পর দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, স্থলে উঠে আসার পর ‘বিপর্যয়’ কিছুটা দুর্বল হয়ে ‘অতি প্রবল’ থেকে ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানান, ঘূর্ণিঝড়টির তীব্রতা কমে এর একটানা বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার থেকে ১১৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তরপশ্চিমে রাজস্থানের দিকে এগিয়ে শুক্র ও শনিবার সেখানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণ হতে পারে। গুজরাটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘বিপর্যয়’ এর প্রভাবে রাজ্যজুড়ে ভারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসসহ ঝড় বইছে। বিভিন্ন স্থানে ৫২৪টি গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এতে প্রায় ৯৪০টি গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। আরব সাগরের মধ্য দিয়ে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে এগিয়ে অবশেষে গুজরাটের জখৌ বন্দরের কাছ দিয়ে উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানে। এ সময় এর বাতাসের একটানা বেগ ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। শুক্রবার স্থানীয় সময় মধ্যরাত আড়াইটার দিকে এটি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বাতাসের বেগে বইছিল, যা দমকা বাতাসসহ ঝড়ো হওয়া আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। গুজরাট সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় তারা রাজ্যের উপকূলীয় ও নিম্নাঞ্চলগুলো থেকে ৯৪ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে এনেছে। ‘বিপর্যয়’ এর কারণে রাজ্যটির ৯৯টি ট্রেন যাত্রা বাতিল বা স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বলে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে জানিয়েছে।