‘তুমি নেই, আজকাল হোস্টেলের বাইরে যাই না-জানো বাবা? তুমি নেই, সেই শূন্যস্থানটা পূরণ হয় না। তোমার সঙ্গে আমার নিরাপত্তার চাদরটা চিরতরে চলে গেছে। তুমি যখন ছিলে, মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত পূর্ণতা ছিল। এখন সবই শূন্য হাহাকার। জানি তুমি আর আসবে না, তবু পথ চেয়ে থাকি...।’ বাবার স্মরণে ফেসবুকে এভাবেই মনের আকুতি প্রকাশ করেছেন রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আফসানা ইসলাম মিলি। তার বাবা গত বছর মারা গেছেন। যে বাবা তার জীবনে ছিলেন শান্তির পায়রা, তিনি উড়ে গেছেন। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে দিবসটি পালন করা হয়। এ দিবস ঘোষণার বিষয়টি প্রথম ১৯১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক তরুণীর মাথায় আসে। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাবা দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন দিবসটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন। বাবারা সন্তানের জন্য ৩৬৫ দিনই ভাবতে পারেন। আজ সেই বাবাদের জন্য স্পেশাল দিন। তবে দিবসটি কাউকে কাঁদায়, কাউকে আনন্দ দেয়। যাদের বাবা বেঁচে আছেন বুকে জড়িয়ে ভালোবাসা দিতে পারেন, নিতে পারেন। রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনিয়ে খাওয়াতে পারেন। বাবা হয়তো বলে উঠবেন, না না, টাকা খরচ করার দরকার নেই। তবু সন্তান যদি বাবার প্রিয় খাবারটি কিনে আনেন, প্রিয় জামা-কাপড় এনে দেন, হাতে তুলে দেন উপহার-তখন আনন্দে বাবার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। যাদের বাবা নেই তারা প্রার্থনা করেন। নানাভাবে স্মরণ করেন বাবার সুখস্মৃতি। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন বস্তিতে বসবাস করেন হিরণ মিয়া। এ শহরে রিকশা চালান। গ্রামের বাড়ি রংপুর। স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে ভাড়া থাকেন। জানালেন, ‘বাবা মোর সাথে থাকে না-বাবার সাথেই হামরা থাকি। ফি সপ্তাহে বাবাকে গোস্ত খাওয়াং।’ জার্মানি থেকে আসা প্রবাসী আমিন শেখ বলেন, আজ আমার বাড়িগাড়ি সবই আছে। কেবল বাবা নেই। মাও নেই। এমন শূন্যতা পূরণ হয় না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গুনগুন হাবীব। বাবাকে হারিয়েছেন এক বছর। তিনি বলেন, বাবা জীবনের অর্জিত সম্পত্তি সন্তানদের দিয়ে গেছেন। আমাদের সুখের জন্য সব গড়েছেন। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয়, বাবা আশপাশেই আছে। কিন্তু জড়িয়ে ধরতে পারি না। বুকে মাথা রাখাতে পারি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রধান ড. মনিরুল ইসলাম খান জানান, একজন সন্তানের কাছে মা-বাবা থাকাটাই যথেষ্ট। বাবা সন্তানের জন্য কী, কতটা মূল্যবান-তা যে সন্তান অনুভব করতে পারে না সে অতি হতভাগ্য। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় বাবা প্রাণপাত করেন। নিশ্চিত করে বলা যায়, সন্তানকে তাদের ভবিষ্যতের ‘বিনিয়োগ’ না ভেবেই বাবা নিজের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দেন। তিনি আরও বলেন, আজকাল পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। সন্তানরা ছোট পরিবার করছে, যে পরিবারে বাবা কিংবা মায়ের জায়গা হচ্ছে না। তবে সন্তানদের জানতে হবে-বাবা শক্তির নাম। বাবা সাহসের নাম। বাবার বেঁচে থাকাটাই নিয়ামত। এ নিয়ামতকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাবার প্রতি পরিপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যেই আদর্শ বাবা হওয়া যায়।