জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের সাফল্য ও অর্জন তুলে ধরতে সেপ্টেম্বর থেকে গণসংযোগ শুরু করবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণায় তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করতে সারা দেশে ‘ছাত্র-যুব সমাবেশ’ করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। এ বিষয়ে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বুধবার দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় দল ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গঠনমূলক তথ্য-উপাত্ত সহকারে বিএনপিসহ বিরোধীদের নানা অভিযোগ ও ‘মিথ্যাচারের’ জবাব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভা শুরু হয়। সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পাঁচ সিটি নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, আরপিও সংশোধনীসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। পরে শুরু হয় মূল আলোচনা। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সভার সঞ্চালনা করেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে ওবায়দুল কাদের সভায় উপস্থিত দলের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কথা বলতে দেন। এ সময় তারা সংগঠনের অবস্থান তুলে ধরেন। আলোচনায় কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতারা কথা বলার সময় তাদের সাংগঠনিক অন্তর্কোন্দলের বিষয় স্পষ্ট হয়। আলোচনার একপর্যায়ে কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি নানা অভিযোগের কথা জানিয়ে বক্তব্য দেন। তার অভিযোগের জবাব দিতে সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে স্মৃতি বারবার উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকেন। এ সময় আওয়ামী লীগের এক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তাকে উদ্দেশ করে বলেন, তুমি তো তোমার কথা বলেছ। এখন আবার এত কথা বলছ কেন? তুমি কী পেয়েছ? তুমি কি হাতির পাঁচ পা দেখেছ? একপর্যায়ে ওই কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গেও তর্কে জাড়ান স্মৃতি। এদিকে সভায় কৃষক লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগকে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। কৃষক লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, কৃষক লীগের বর্তমান কমিটি ভালো করছে। ছোটখাটো বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে-নিজেদের কোনো ভুলভালে শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার চিত্র যেন ম্লান না হয়। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে না পারায় জাতীয় শ্রমিক লীগকে নতুন করে আর কোনো কমিটি অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবারও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের কমিটি দ্রুত করার তাগাদা দেন। এ সময় উত্তরের নেতারা জানান, তাদের কমিটি প্রস্তুত আছে। এ বিষয়ে দলীয় সভাপতিকে তারা অবহিতও করেছেন। অন্যদিকে দক্ষিণের নেতারা দ্রুত কমিটি চূড়ান্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কাছে আর কিছুদিন সময় চান। ওবায়দুল কাদের সভায় উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সম্মেলন হওয়া সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকেও দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার তাগাদা দেন। সভায় উপজেলা শাখার সম্মেলন স্থগিত করার প্রসঙ্গ তুলে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিকে সতর্ক করেন আওয়ামী লীগের এক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বলেন, তোমার কেন্দ্রীয় কমিটি, তোমরা জেলা পর্যন্ত থাক। উপজেলা কমিটিগুলো জেলাকে করতে দাও। জানা গেছে, সভায় শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় এবার শোকের মাসের কর্মসূচি কেমন হবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিজেদের মতো খসড়া কর্মসূচি করতে বলেন। আগামী সপ্তাহে আবার বৈঠক করে এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বৈঠকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শোকের মাসের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। শোকের মাসে আমরা নানা কর্মসূচির মধ্যে থাকব। গণসংযোগ শুরু করার বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় শোকের মাস (আগস্ট) পার হলেই আমরা সারা দেশে গণসংযোগ করব। সেখানে আমরা সরকারের সাফল্য, উন্নয়ন, অর্জন এবং বিএনপি জামায়াতের সময়ে তাদের নানা অপকর্ম জনগনের সামনে তুলে ধরব।