বিএনপির সমাবেশে বাধা দেবে না পুলিশ

প্রকাশিতঃ জুলাই ১১, ২০২৩ | ৮:১৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আগামীকাল নয়াপল্টনে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নয়পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের ওই সমাবেশে থেকে সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি আসতে পারে। তাই ওই সমাবেশ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সামনের সম্ভাব্য আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সমাবেশে যেন বাধা না দেওয়া হয়, সে বিষয়ে পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, পুলিশের পক্ষ থেকে আগ বাড়িয়ে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যাতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তবে সমাবেশের নামে কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। কোনোভাবেই সুযোগ সন্ধানীদের অপচেষ্টা সফল হতে দেওয়া যাবে না। যারা নাশকতা করবে তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পুলিশের সবাইকে চেনই অব কমান্ড মেনে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘নগরবাসীর নিরাপত্তা দিতে ডিএমপি সব সময় প্রস্তুত। যে কোনো সমাবেশের আগেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বুধবারের সমাবেশের জন্য বিএনপিকে অফিসিয়ালি অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে কমিশনার মহোদয় মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন বলে শুনেছি। অনুমতি থাকলে নিশ্চয়ই বিএনপি সমাবেশ করতে পারবে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। যানচলাচল স্বভাবিক রাখা এবং অফিস-আদালত চালু রাখাসহ নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা নাশকতা করবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।’ নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনায় পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সব ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অতীতে গায়েবি মামলার (ঘটনা না ঘটলেও মামলা) কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এবার যাতে এ ধরনের কোনো মামলা না হয় সে বিষয়ে জেলার এসপি, বিভিন্ন অপরাধ বিভাগের উপ-কমিশনারদের (ডিসি) বিশেষ নজর রাখতে হবে। কেউ মামলা করতে থানায় গেলে কালক্ষেপণের মাধ্যমে তাকে হয়রানি করা যাবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিতে হবে। আবার দ্রুত মামলা নিতে গিয়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপির সমাবেশ ও সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মেকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে একজন অতিরিক্ত আইজিপি জানান, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের তালিকা পুলিশের হাতে আছে। তালিকা বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনক নেতাকর্মীদের নজরদারিতে আনা হয়েছে। তাই ইচ্ছা করলেই কেউ নাশকতা বা বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পারবে না। জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম) অতিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে ডিএমপির পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, কেউ বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, যখন যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কেউ যেন চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। জেলায় কোনো ঘটনা ঘটলে অবশ্যই এসপিকে জানাতে হবে। এসপির নির্দেশনা অনুযায়ী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে রেঞ্জ ডিআইজি এমনকি পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা নিতে হবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় কিছু ঘটলে সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিভাগের উপ-কমিশনারকে দায়িত্ব নিতে হবে। বড় ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই, শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এপিবিএন, নৌ পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অধিকতর তৎপর হতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে অগ্রিম নিরাপত্তা প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এসবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে সক্রিয় আছে। মাঠ পর্যায়ে যে কোনো ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে পুলিশ সদর দপ্তর প্রস্তুত আছে। জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য পুলিশ যথেষ্ট তৎপর। মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশ পেশাদারিত্ব ও আইনানুগ দায়িত্ব পালন করবে।