রাজধানী ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার পথে বুধবার বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ৭৩ জনকে আটক করেছে। সাভারে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ বিএনপির ৬০ নেতাকর্মীকে আটক করে। এছাড়া ভাড়া করা ৪০টি গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গায় খেয়া পারাপারেও বাধা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবাহনে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলায় ১২ জন আহত হন। এ সম্পর্কে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- সাভার : কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ সাভারের বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্তত ৪০টি গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটক নেতাকর্মীদের দিনভর থানা হাজতে রেখে বিকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতা খোরশেদ আলমকে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখারও অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানায়, তল্লাশি চালিয়ে কোনো নেতাকর্মীকে আটক করা হয়নি। বিএনপি নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখার খবরও সঠিক নয়। ঢাকা জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে সাভার থেকে ১ হাজার নেতাকর্মী আমার বাড়িতে জমায়েত হন। এজন্য ৭০টি হাইয়েস গাড়ি ভাড়া করা হয়। ছায়াবিথী এলাকায় পুলিশ আমার শ্বশুরবাড়িতে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। ভাড়া করা ৪০টি গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয় পুলিশ। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর সন্নিকটে আমিনবাজার এলাকায় পৌঁছালে বাস তল্লাশি করে তার ৩০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। অন্য নেতাকর্মীদের বাস থেকে নামিয়ে সাভারের দিকে ফিরিয়ে দেয়। সাভার থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন বলেন, ১০টি বাস ও তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে আমরা রওয়ানা দেই। আমাদের তিনটি মাইক্রোবাস বিরুলিয়া ব্রিজের কাছে থামিয়ে পুলিশ তল্লাশি করে। এ সময় সাভার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফাসহ ৩০ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে। আমিনবাজারে বাসচালক ফরিদ উদ্দিন বলেন, চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ ঢাকায় কোনো বাস ঢুকতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বাস ঘুরিয়ে আবার সাভারে ফিরে এসেছি। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে। এজন্য আমরা আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়েছি। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম বলেন, নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। কেরানীগঞ্জ : বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পারাপারের সব ধরনের নৌযান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি খেয়া নৌকাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এছাড়া সদরঘাটের ওয়াটার বাসও বন্ধ ছিল। তেলঘাটের মাঝি রাজ্জাক হোসেন বলেন, খেয়া ঘাটে নৌকা চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু নেতারা খেয়া পারাপার বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। মধুপুর ও গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : ধনবাড়ী ছাত্রদলের গাড়ি গোপালপুরের নগদা শিমলা বাজারে পৌঁছলে সরকারদলীয় ক্যাডাররা হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় ১২ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আহতদের বেশ কয়েকজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে হামলার কথা অস্বীকার করেছে গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফরিদপুর : সমাবেশে যাওয়ার পথে ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। মাইক্রোবাস থামিয়ে তাদের আটক করা হয়। এছাড়া ২০ থেকে ২৫টি মিনিবাস ও মাইক্রোবাস থামিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তারা হেঁটে রওয়ানা দেন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন জানান, বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। তারা হলেন-জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান, সহসভাপতি অনিক খান, নিশাত আহমেদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, রেজাউল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক শামীম খানসহ কয়েকজন।