গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের নদ-নদী সমূহের পানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল এই পানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এর প্রভাবে কুড়িগ্রামে ইতিমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৯টায় পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা গত ২৪ ঘণ্টা আগে ছিলো মাত্র ৮ সেন্টিমিটার। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে । দুধকুমার নদ তীরবর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ও বামনডাঙা ইউনিয়ন এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন এবং উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের কিছু কিছু নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হতে শুরু করেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার প্রধান নদ-নদী গুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি ধরলার কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেমি. ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেমি. ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে যা যেকোনো সময় বিপৎসীমাকে অতিক্রম করতে পারে। পাউবোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে করে চরাঞ্চলসহ নদ নদী তীরবর্তী এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বর্তমানে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হচ্ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিপৎসীমায় পৌঁছাতে পারে। একই কারণে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানিও বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহস্পতিবার সকালে নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, দুধকুমার অববাহিকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় এবং নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ফান্দেরচর, চর দামাল গ্রাম, মাঝের চর ও আদর্শ বাজার গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এসব চরাঞ্চলের নিচু এলাকার বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। ফান্দেরচর গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পানি বাড়তেছে। গ্রামের কিছু কিছু বাড়ি ঘরে পানি ঢুকছে। পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। দুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতার জন্য চারটি উদ্ধারকারী বোট, চারটি স্পিড বোট ও দুই শতাধিক স্থানীয় নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্কাউট, রোভার স্কাউট এবং রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি প্রস্তুতি মোকাবিলায় ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৬৫০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় নৌকা প্রস্তুত রেখেছি। পশু খাদ্য যেন ঘাটতি না হয় সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রেখেছি। পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা দুধকুমার নদের পানি বাড়তে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত বাড়বে। এতে করে নিম্লাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এরপর পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।