জনগণের গণঅভ্যুত্থানের ‘সুদিন’ আসন্ন: এবি পার্টি

প্রকাশিতঃ জুলাই ১৫, ২০২৩ | ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

এবি পার্টি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকার গত ১৫ বছরে গুম, খুন, হামলা, মামলা করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। সর্বশক্তি নিয়োগ করেও তারা বাংলার মানুষের কণ্ঠ রোধ করতে পারেনি। এই দেশের মালিক ও গৃহস্থ, সাধারণ জনগণ আজ চরম বিক্ষুব্ধ। চোরের দশদিন আর গৃহস্থের একদিনের মত আজ আওয়ামী চোর-ডাকাতদের সুদিন শেষ, এবার জনগণের গণঅভ্যুত্থানের ‘একদিন’ ও ‘সুদিন’ আসন্ন। সরকার পতনের এক দফা ও দলীয় ২ দফা দাবিতে পূর্বনির্ধারিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে এবি পার্টি নেতৃবৃন্দ শুক্রবার এসব কথা বলেন। প্রবল বর্ষণের মাঝে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় একাত্তর চত্বরে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। দলের সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। আরও বক্তব্য রাখেন- পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএম নাজমুল হক, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, যুবপার্টির আহবায়ক এবিএম খালিদ হাসান ও ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বদলীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে ৯০ দিনের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ তৈরি হয়েছিল। দুঃখজনক হলো সুপ্রিম কোর্টের কাঁধে বন্দুক রেখে সেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা বাতিল করবার মধ্য দিয়ে সরকার তার নির্বাচনী ম্যান্ডেট ও শপথ ভঙ্গ করেছে। ২০১১ সালের ১০ মে আদালত তার সংক্ষিপ্ত রায়ে আরও দুটো নির্বাচন একই পদ্ধতিতে করার মতামত দিলেও লিখিত রায় প্রকাশিত হবার আগেই ৩০ জুন ২০১১ তাড়াহুড়া করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় সরকার। সংসদীয় কমিটির সর্বসম্মত মতামতও এতে উপেক্ষা করে দেশকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয় বর্তমান সরকার। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরে যাবার ১৫ মাস পরে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের লিখিত রায়ে এই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করা ছিল জাতির সঙ্গে বেঈমানি করার সামিল। বর্তমানে চলমান অনিশ্চয়তার পুরো দায় এই সরকারের। প্রধান বক্তা মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার গত ১৫ বছরে গুম, খুন, হামলা, মামলা করে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তারা দেখেছে তবুও বাংলার মানুষের কণ্ঠ রোধ করা যায়নি। উন্নয়নের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তাদের চুরি, ডাকাতি, লুটপাটের কলঙ্ক ঢাকা দেওয়া যায়নি। ঝামেলা হলে দেশ থেকে পালানোর যে আয়োজন তারা করেছিল সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম চোরের দশদিন আর গৃহস্থের একদিন। আওয়ামী চোর-ডাকাত লীগ আমাদের কথা শোনে নাই। ৬০০ টাকার কাঁচা মরিচের ঝাল, ১৮০ টাকা কেজির চিনি, তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং, দেশের রিজার্ভ শূন্য করে দেয়ার ক্ষোভে মানুষ আজ ফুঁসে উঠেছে। এই দেশের মালিক ও গৃহস্থ সাধারণ জনগণ আজ চরম বিক্ষুব্ধ। চোর-ডাকাতদের সুদিন শেষ, এবার জনগণের গণঅভ্যুত্থানের ‘একদিন’ আসন্ন। তিনি জনগণকে ‘আওয়ামীলীগের শেষ দিন, জনগণের একদিন’র জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছরে বাংলাদেশ আজ সত্যিকারের যুগ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের আগামীর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পারলে বাংলাদেশ পথ হারাবে এবং ব্রিটিশ আমলের মতো পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশে গত ১০টি সাধারণ নির্বাচনের তিন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সেগুলো ছিল তুলনামূলক ভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭ টি নির্বাচন ছিল কলঙ্কিত ও প্রহসনের। সর্বদলীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানে সংযোজিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে বাতিল করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা আদালতের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য গায়ের জোরে বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে হবে। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সিনিয়র সরকারী সদস্য সচিব আব্দুল বাসেত মারজান, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, গাজীপুর জেলা আহবায়ক এম আমজাদ খান, গাজীপুর মহানগর আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন, যুবপার্টির সদস্য সচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সহকারী সদস্য সচিব মেহেদী হাসান চৌধুরী পলাশ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব ফিরোজ কবির, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম খান, আব্দুল হালিম নান্নু, গাজীপুর মহানগর যুবপার্টির আহবায়ক মাসুদ জমাদ্দার রানা, সদস্য সচিব সুলতানা রাজিয়া, নারী নেত্রী শীলা আক্তার, আমেনা বেগম, মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম নুরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বৃষ্টি বিঘ্নিত সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।