বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ভর্তিবাণিজ্য বন্ধে বিশেষ কমিটি গঠনের বিধান হচ্ছে। এর সদস্যরা গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির বিকল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠানের সংকটকালীন মুহূর্তে কাজ করবেন। নাম হবে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি কমিটি’। দুই বছর মেয়াদি এই কমিটি গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির মতো সব ক্ষমতা ভোগ করতে পারবে। এটা গঠনের এখতিয়ার থাকবে সরকারের হাতে। তবে সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে শিক্ষা বোর্ডগুলোও কমিটি গঠন করতে পারবে। সম্প্রতি এমন বিধান যুক্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এর খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি পাশ হওয়ার কথা। প্রস্তাবিত প্রবিধান মতে, কমিটির সভাপতির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক, একই ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি সভাপতি থাকতে পারবেন না। এছাড়াও বেশকিছু বিধান এতে যুক্ত করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে ভর্তি ও নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ থেকে উত্তরণের জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে এ বিশেষ প্রবিধানটি করা হচ্ছে বলে সংসদীয় কমিটি সূত্র জানিয়েছে। প্রবিধানমালায় প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও সুনাম রক্ষার স্বার্থে চারটি কারণে বিশেষ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।এরমধ্যে আছে-গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে, শিক্ষার্থী ভর্তি অথবা অতিরিক্ত ভর্তি ফরম পূরণ এবং নিয়োগ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলেও একই বিষয় প্রযোজ্য হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতি-অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে বিশেষ কমিটিই বিষয়টি দেখবে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডিসংক্রান্ত প্রবিধান জারি হয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পদাধিকার বলে সংসদ-সদস্য এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকার বিধানসহ কিছু ধারা বাতিল করা হয়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিধান আছে। এ ছাড়া মেয়াদের মধ্যে নতুন কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে বা কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে অ্যাডহক কমিটি গঠনের বিধানও বিদ্যমান। অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ ৬ মাস। নতুন প্রবিধানমালা অনুযায়ী বিশেষ কমিটি বা উদ্ভূত পরিস্থিতি কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বা তার মনোনীত প্রতিনিধি সভাপতি হবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মনোনীত একজন অভিভাবক প্রতিনিধি এ কমিটির সদস্য হবেন। ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় শহরে এ ধরনের কমিটির সভাপতি হবেন বিভাগীয় কমিশনার বা তার প্রতিনিধি। এই কমিটির সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক বা উপপরিচালকের প্রতিনিধি, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং বিভাগীয় কমিশনার মনোনীত একজন অভিভাবক প্রতিনিধি। অন্যান্য ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক বা তার মনোনীত প্রতিনিধি হবেন বিশেষ কমিটি বা উদ্ভূত পরিস্থিতি কমিটির সভাপতি। এ ছাড়া সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক মনোনীত একজন অভিভাবক প্রতিনিধি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান হবেন কমিটির সদস্য সচিব। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি বা অ্যাডহক কমিটির বিকল্প হিসাবে এই কমিটি গঠনের বিধান করা হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন বা শৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ার যে প্রবণতা তা রোধ করা সম্ভব হবে।