দেশের ৪২টি পণ্যের রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে সরকার প্রতিবছর নগদ সহায়তা দিয়ে আসছে, যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, এক্ষেত্রেও অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জালিয়াতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা না মেনে ৩৭টি উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তার ২৪১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিপুল অঙ্কের এ অর্থ ৩৭টি ব্যাংকের ৮৯ শাখার মাধ্যমে বের করে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিজের বলে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি দেখানো, এক দেশে রপ্তানি করে অন্য দেশের প্রত্যাবাসিত মূল্য দেখানোর মতো জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালে উপস্থাপিত সর্বশেষ ২০২১ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, মূলত নগদ সহায়তা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিল পদ্ধতির কারণে এ খাত ঘিরে গড়ে উঠছে একাধিক চক্র। দেশি পণ্য রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তার শর্ত হচ্ছে দেশীয় উপকরণ দিয়ে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত শতভাগ পণ্য সরাসরি বিদেশে রপ্তানি করা। আর পণ্যের মূল্য প্রত্যাবাসিত হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, নগদ সহায়তা নিরূপণ পদ্ধতির জটিলতার কারণে একে ঘিরে অনিয়ম ও দুর্নীতি বাড়ছে। নগদ সহায়তা নেওয়ার ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণপত্র উপস্থাপন না করেই অনিয়মে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত উপমহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. আহসান হাবীব জানিয়েছেন, জনবলের অভাবে সবকটি ব্যাংকের শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হয় না। যাচাই-বাছাইয়ের আওতা বাড়ানো গেলে এ ধরনের অনিয়ম আরও বেশি শনাক্ত করা যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মতে, এ খাতে নগদ সহায়তা সরাসরি প্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্যের ওপর প্রদান করা দরকার। রপ্তানি খাতের নগদ সহায়তা ঘিরে যত দুর্নীতি হচ্ছে, তার মূল কারণ বর্তমান নিরূপণ পদ্ধতি। এ কারণে বিভিন্ন পক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে আর বঞ্চিত হচ্ছে রপ্তানিকারকরা। এমন অবস্থায় এ খাতে নগদ সহায়তা নিরূপণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদ্ধতিগত জটিলতা দূরীকরণে উদ্যোগী হবে। পাশাপাশি এটিকে ঘিরে বিভিন্ন পক্ষ যে দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটিও বন্ধ হবে-এটাই প্রত্যাশা।