প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন, বঙ্গভবন এবং জাতির পিতার সমাধিস্থলসহ সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআই (কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন) ৫৮৪টি। এসব স্থাপনায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন কেপিআইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন তা সরেজমিন যাচাই করে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কার্যালয়ে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে কার কী দায়িত্ব তা নিরূপণ করে ইভাকুয়েশন প্লান আধুনিকায়ন করতে জোর দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহড়ার পাশাপাশি বাড়াতে বলা হয়েছে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামাদি। শুধু তাই নয়; কেপিআইগুলোতে গতানুগতিক ব্যবস্থার বাইরে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে সারা দেশের সব কেপিআইয়ের নিরাপত্তার নির্দেশনা দেওয়া যাবে এক ক্লিকেই। সফটওয়্যারটির নাম দেওয়া হয়েছে কেপিআই ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারে ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) জাহিদ হোসেন ভূঁইয়াকে। গত ২২ জুন এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ও এসবি প্রধান মানিরুল ইসলাম। সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, কেপিআই ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় এসবি সদর দপ্তর থেকে ৬৪টি জেলার এসপি, মেট্রোপলিটন উপকমিশনার (ডিসি) এবং কেপিআই-এর দায়িত্বশীলদের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সব কেপিআই প্রধান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার ই-মেইল এবং টেলিফোনে নিয়মিত নতুন নতুন বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এসবি প্রধানের পক্ষে এসব বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন একজন পুলিশ সুপার। সূত্র আরও জানায়, কেপিআই ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার উদ্বোধনের পর গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক প্রতিবেদন আসে এসবি সদর দপ্তরে। আর কেপিআই ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করে এসবি সদর দপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে দুই হাজারের বেশি নির্দেশনা। এসবের মধ্যে ঈদের আগে কেপিআই এলাকায় আত্মঘাতী হামলার আশঙ্কা সংক্রান্ত নির্দেশনা রয়েছে। ঈদের পর যেসব নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে কেপিআইয়ের সার্বিক অবস্থা অবগত করে সংশ্লিষ্ট জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানো সংক্রান্ত। কেপিআইয়ের নিরাপত্তাসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি তদারকি ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। যেসব কেপিআইয়ের সীমানা নির্ধারিত করা নেই সেগুলোর সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে দ্রুত প্রাচীর দিতে হবে। আগের দেওয়া যেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো ত্বরিত বাস্তবায়ন করতে হবে। কেপিআইয়ের আশপাশে অবৈধ দখলদাররা যেসব স্থাপনা নির্মাণ করেছে সে বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সব কেপিআইকে সিসি ক্যামেরর আওতায় আনার পাশাপাশি এর মেমোরি কমপক্ষে এক বছর সিডিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থাপনার নিরাপত্তায় পুরো এলাকা ফ্ল্যাড লাইট অথবা সার্চ লাইট দিয়ে আলোকিত করে রাখতে হবে। নষ্ট সিসি ক্যামেরা চালু ও জনবল বাড়াতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, সব কেপিআইয়ের জন্য নিরাপত্তা কমিটি গঠন করতে হবে। যেসব কেপিআইয়ে কমিটি নেই সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কেপিআই নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাতে হবে। প্রাত্যহিক ঘটনা নোট বইয়ে লিপিবদ্ধ করতে হবে। যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল সেখানে দ্রুত প্রহরা চৌকি স্থাপন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে কোনো দর্শনার্থী আগমন করলে তাদের নাম-ঠিকানা, আগমন ও প্রস্থানের তারিখ, সময়, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ ও রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। কেপিআইয়ে কর্মরতদের নিরাপত্তা পাশ চালু রাখতে হবে। রাজশাহী বেতারের নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব বলেন, দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা সমুন্নত রাখতে এখানকার নিরাপত্তাসংশ্লিষ্টদের এনএসআই ট্রেনিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। দায়িত্ব পালনের প্রতি পালায় কর্মসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আনসার ও বিভাগীয় প্রহরী নিয়োগ দেওয়া জরুরি।এছাড়া পুলিশি ব্যবস্থাপনায় যাবতীয় ব্যয়ভার স্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কেপিআইয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে এসবির সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাই অফিসিয়াল বক্তব্য দিতে রাজি হননি। মাদারীপুরের এসপি মাসুদ আলম বলেন, জেলা পর্যায়ে এসবি সদস্যরা এসপির অধীনেই কাজ করে। তিনি বলেন, এসবি সদর দপ্তরের নির্দেশনা আনুযায়ী কেপিআইয়ের ধরন অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নতুন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কেপিআই নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি জানান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জিয়াউল আহসান তালুকদার বলেন, ‘কেপিআইয়ের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করছেন। নিয়মিত ব্রিফিং করছেন। আমার এলাকায় কোনো কেপিআই এখন পর্যন্ত ঝুঁকিতে নেই।’