জেলা কমিটির অনুমতি ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমতো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ এবং ছাত্রলীগের কমিটি করছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো মতামত নেওয়া হচ্ছে না। এসব কমিটিতে বিএনপি জামায়াত থেকে আসা লোকদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই ফারুক চৌধুরী তানোরের পৌর এলাকায় একই মঞ্চ থেকে পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা দেন। এসব কমিটি ঘোষণার সময় মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সহযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করতেই এসব কমিটি করা হচ্ছে বলে তিনি বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ জুলাই তানোরের কলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে একাধিক কমিটি ঘোষণা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদন ছাড়াই কলমা ইউনিয়নকে পূর্ব ও পশ্চিম নামে দুই ভাগে বিভক্ত করে আওয়ামী লীগের দুটি ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই মঞ্চ থেকে ইউনিয়ন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সব সংগঠনের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। অভিযোগে জানা গেছে কলমা পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে আব্দুর রহিমকে। এই আব্দুর রহিমের পুরো পরিবার এলাকায় কট্টর আওয়ামী লীগবিরোধী পরিবার বলে পরিচিত। রহিম মাত্র কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। এদিকে গত ২১ জুলাই গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে ফারুক চৌধুরী ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করেন। শহিদুল ইসলাম শহিদকে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও বাবুল আকতারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আকতার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল্লাহ চেয়ারম্যানের ছেলে। এদিকে আগামী ৩০ জুলাই গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সব সংগঠনের কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলন ডেকেছেন ফারুক চৌধুরী। আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে বলে ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। গোদাগাড়ীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে গত কয়েক বছরে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিপুল সংখ্যায় অনুপ্রবেশ করেছেন। আগামী ৩০ জুলাই তারাই কমিটিগুলোতে জায়গা পাবেন বলে আশঙ্কা করছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তার পক্ষের নয়, তারা নতুন কোনো কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন না। ফলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, ফারুক চৌধুরী সাংগঠনিক রীতিনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে একক সিদ্ধান্তে গণহারে কমিটি ঘোষণা করে তৃণমূলে দলকে বিভাজনের কাজটাই করছেন। এছাড়া কমিটি গঠনে ফারুক চৌধুরী বিএনপি জামায়াত থেকে আসা লোকদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। কমিটি ঘোষণা প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি তাজবুল ইসলাম বলেন, তিনি এভাবে গণহারে সব সহযোগী সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করতে পারেন না। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা আছে। আবার এজন্য কাউন্সিলরও করতে হবে দলের তৃণমূল থেকে। এত স্বেচ্ছাচারিতা চালালে ত্যাগী নেতাকর্মীরা দল করতে পারবেন না। আমরা এভাবে ঘোষণা করা কোনো কমিটিকে অনুমোদন দেব না। ওমর ফারুক চৌধুরী কমিটি গঠন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন বলেন, গঠনতন্ত্রের কোথাও বলা নেই একই মঞ্চ থেকে একাধিক কমিটি ঘোষণা করা যাবে না। তিনি বলেন, কাউন্সিলররা সবাই উপস্থিত থাকছেন। তাদের মতামত নিয়ে এমপি সাহেব কমিটি ঘোষণা করেছেন।