ডেঙ্গু নিধনে বাজেট কোথায় যায়

প্রকাশিতঃ জুলাই ২৬, ২০২৩ | ৮:২১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ডেঙ্গুর কাছে দেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজধানীবাসী। বর্ষা এলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে পেয়ে বসে নগরবাসীকে। এবার এই আতঙ্ক বহু মাত্রায় বেশি। কারণ এবার মৃত্যু এবং আক্রান্ত-সবই ঊর্ধ্বমুখী। সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এরই মধ্যে। নগরবাসীকে এই ভয়ংকর ডেঙ্গুর কবল থেকে রক্ষার দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটির। এর জন্য প্রতিবছর থাকে মোটা অঙ্কের বাজেট। কাগজে-কলমে বাজেট প্রণয়ন হয়, ছাড় হয়, পরিকল্পনাও হয়। কিন্তু বাস্তবে তারা ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, সিটি করপোরেশনে প্রতি অর্থবছরে যে বাজেট বরাদ্দ হয় তা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন হয়। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এই বরাদ্দ ব্যয় হয়। বিগত তিন বছরে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এডিশ মশার ক্ষেত্রে ভিন্ন বিষয়। এক্ষেত্রে বাজেট কোনো বিষয় নয়। মানুষের সচেতনতা বড় বিষয়। নগরবাসী সচেতন হলে অতিদ্রুত এডিশ মশা নির্মূল করা সম্ভব। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রতি অর্থবছরের ডেঙ্গুর বাজেট যথাযথভাবে ব্যয় করে। আমরা পরিবেশবান্ধব ওষুধ ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। কিন্তু কেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সেটি আমারও প্রশ্ন। তবে এই ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে বাজেটের পাশাপাশি নগরবাসীকে সম্পৃক্ত হতে হবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্বববিদ ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, দুই সিটির অর্থবছরে ডেঙ্গুর যে বাজেট রাখা হয় তা সঠিকভাবে ব্যয় হয় না। তারা কিছু প্রচারণা, মেশিন ক্রয় ও মেরামতে এবং অন্যান্য কাজে এই টাকা ব্যয় করে থাকে। এটা আসলে কোনো কার্যকর পদ্ধতি না। তারা সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম অনুসরণ করে না। সার্ভিলেন্স সিস্টেমও তারা প্রয়োগ করে না। যেখানে একাধিক অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ দরকার। অথচ নগরে কীটতত্ত্ববিদদের কোনো ইউনিট সেল নেই। জানা গেছে, মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর বাজেটের আকারও বাড়ছে। রাজধানীর দুই সিটি বিভক্ত হওয়ার পর মশার বাজেট বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। ঢাকায় মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। মশার দাপটে নগরবাসী এখন অসহায়। আতঙ্কে আছেন রাজধানীর নানা শ্রেণির মানুষ। কিন্তু বাজেটের এই অর্থ মশা নিধনে কতটুকু ব্যবহার করা হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ভুক্তভোগী নগরবাসীর। প্রায় দেড় কোটি মানুষের দুই সিটির জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য প্রায় ১০৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বাজেটের খাত অনুযায়ী, ডিএনসিসি গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ রাখা হয় ৭৪ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটির বরাদ্দ ২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঢাকা সিটি বিভক্তের পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটিতে এই বাজেটের অঙ্ক ১২ কোটি এবং ঢাকা দক্ষিণে এই পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে দুই সিটি ভাগ হওয়ার পর থেকে মশার বাজেট বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি। তারপরও ডেঙ্গু মশা না কমায় উদ্বিগ্ন রাজধানীবাসী। ১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট গঠিত হয় ঢাকা পৌরসভা। ১৯৭৮ সালে তা সিটি করপোরেশনে পরিবর্তিত হয়। এরপর নগর সম্প্রসারণের সঙ্গে তাল মেলাতে ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটিতে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে মশক নিধন কাজে মোট ব্যয় ছিল ৩২১ কোটি টাকা। আর বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত মশক নিধন কাজে মোট ব্যয় করেছে হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে এই দীর্ঘ সময়ে পথ পরিক্রমায় মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নেই তেমন কোনো সফলতা। বরং গত ২৭টি অর্থবছরে মশক নিধন কাজে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩শ কোটি টাকা। এদিকে সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৫ হাজার ২৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এতে মশা নিধনে বরাদ্দ রেখেছে প্রায় ১২২ কোটি টাকা। যেটি মোট বাজেটের প্রায় ২ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী এ খাতে ব্যয়ের তুলনায় এবারের বরাদ্দ প্রায় দেড়গুণ বেশি। এই বাজেটের মধ্যে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা, ডেঙ্গু মোকাবিলা, মশক নিধনে যন্ত্রপাতি কেনা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার কাজে এই টাকা ব্যয় করা হবে।