উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে ৩০০ ফুট সড়ক

প্রকাশিতঃ জুলাই ২৭, ২০২৩ | ৮:৫২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

উদ্বোধনের আগেই শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়ক কাটাকাটির ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। মেট্রোরেল লাইন-১ নির্মাণের কারণে দৃষ্টিনন্দন, মজবুত ও টেকসই এ সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে মেট্রোরেলের লাইনটির নির্মাণ কাজের পরিকল্পনা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্পের জন্য অত্যধিক জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবের পক্ষে নয় পরিকল্পনা কমিশন। অতিরিক্ত ভূমির বিষয়টি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পর্যায়েই যথাযভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজন ছিল। ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (লাইন-১)’ এর পর্যালোচনা সভা। সেখানে এসব বিষয়ে প্রশ্ন উঠে আসে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বুধবার বলেন, এখানে কোনো সংস্থাই দায় এড়াতে পারে না। রাজউক বলবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। আর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলবে আমরা তো এত কিছু জানি না। কিন্তু এখানে পরিকল্পনা কমিশনের একটা মূল ভূমিকা থাকা উচিত ছিল। কেননা তারা তো প্রকল্প দুটোই অনুমোদন দিয়েছে। কাজেই তাদের কাছে তথ্য আছে। কিন্তু তারা তো কোনো দায় নেয়নি। এখানে রাস্তা বানিয়ে কাটার চেয়ে বানানোর আগেই সমন্বয় থাকা দরকার। এতে অর্থ ও সময়ের অপচয় কম হতো। পাশাপাশি রাস্তার স্থায়িত্বও ঝুঁকির মধ্যে পড়ত না। সূত্র জানায়, পর্যালোচনা সভায় কথা বলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৗশলী। তিনি বলেন, বর্তমানে যে পন্থায় এমআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এতে উক্ত এলাকায় বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকল্পে রাজউকের খালের ওপর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে, যা কাম্য নয়। ৩০০ ফুট রাস্তায় লাইন-১ প্রকল্পের মাধ্যমে ওভারপাস রাস্তা নির্মাণ না করলে ভালো হয়। নবনির্মিত রাস্তাটির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য যে স্থান পুরোপুরি উন্মুক্ত রয়েছে সেখান দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন বাস্তবায়ন করা যায়। এছাড়া ৩০০ ফুট রাস্তাটি আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনের পর পরই সাধারণ মানুষ যথাযথভাবে নবনির্মিত রাস্তাটি ব্যবহারের সুযোগ না পেলে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক হবে। এ প্রসঙ্গে সভায় উপস্থিত রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, এই রাস্তায় ৫টি ইন্টারসেকশন আছে এবং এগুলোর নিচে পানির রিজার্ভার রয়েছে। ইন্টারসেকশনগুলোর কোনো ক্ষতি হলে রাস্তা চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত হয়ে যেতে পারে। তাই কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে আরও নিবিড় পর্যালোচনা ও যথাযথ সমন্বয়ের প্রয়োজন। এসব বিষয়ে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বলেন, ৩০০ ফুট রাস্তার মিডিয়ান দিয়ে এই লাইনটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আছে। এক্ষেত্রে এমআরটি লাইন নির্মাণের ফলে নবনির্মিত রাস্তার যে ক্ষতি হবে তা এমআরটি প্রকল্প হতে বহন করা হবে। এ পর্যায়ে সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, এমআরটি লাইন নির্মাণের কারণে নবনির্মিত রাস্তার যে ক্ষতি হবে তা বহন করবে মূলত রাষ্ট্র। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া এবং পরিকল্পনা পর্যায়ে সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল। সভায় জুমে অংশ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় জনস্বার্থে বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্পের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সিটি করপোরেশন নীতিগতভাবে একমত হলেও কারিগরি বিষয় পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের জন্য সিটি করপোরেশনের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে কাজিপাড়া-শেওড়া পাড়াসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থানে ড্রেনের ওপর লাইনের পিলার স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এমনকি এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়ন কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে বর্তমানে মেট্রোরেল প্রকল্পটিতে ৯৭ দশমিক ১৫ একর জমির সংস্থান আছে। এখন নতুন করে প্রায় ৩৯ একর বাড়িয়ে মোট ১৩৬ দশমিক ৩২ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এ খাতে ব্যয় ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত আরও ২ হাজার ৩১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার সংস্থান রেখে প্রকল্প সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে বাড়তি জমির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমসিএল এর প্রতিনিধি। আলোচনার পর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, বর্তমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম যতটুকু জায়গা নিয়ে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অর্জিত হবে এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা যথাযথ হবে।