‘হাইপ্রোফাইল’ ঠিকাদারের লোকজনের হাতে নাজেহাল হচ্ছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা। দিনে দিনে ফাইল স্বাক্ষর না করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে হুমকি-ধমকি প্রদান, চাপ প্রয়োগ, এমনকি অফিস কক্ষের দরজায় লাথি মারার ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে ওয়াসার সাধারণ কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ আছে, ওয়াসার কিছু সুবিধাভোগী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘প্রশ্রয়ে’ ঠিকাদারের লোকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করার দুঃসাহস দেখান। সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের স্বার্থরক্ষায় অপেক্ষাকৃত সৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা জায়গায় অভিযোগ প্রদান, কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানসহ নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার নতুন ভবন নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবু সাফায়াত মুহম্মদ সাহেদুল ইসলামের ওপর চাপ প্রয়োগ, দিনে দিনে বিলে সই করতে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের নাম এম. জামাল অ্যান্ড কোং লিমিটেড। ২০১৯ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াসার দুটি বেসমেন্ট এবং তিনতলা ভবন নির্মাণ কাজ পায় ওই প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম ওয়াসায় কেমিক্যাল সরবরাহকারী অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিফা কেমিক্যালের ফাইল স্বাক্ষরের জন্যও অনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। ওয়াসার তৎকালীন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) মো. ছামছুল আলম নিজেই ওই ঠিকাদারের পক্ষ হয়ে বিল আসা মাত্রই অর্থ ছাড়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতেন। ঠিকাদারকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে দ্রুত ফাইল স্বাক্ষর করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপককে চাপ প্রয়োগ করতেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (উপ-সচিব) আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলামের পাঠানো এক চিঠিতে দুই ‘হাইপ্রোফাইল’ ঠিকাদারের এমন মারমুখী আচরণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের বিলের দুটি ফাইল স্বাক্ষর হতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে তাকে শোকজ করেন চট্টগ্রাম ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ) (বর্তমানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে কর্মরত) মো. ছামছুল আলম। এর জবাবে উঠে আসে হাইপ্রোফাইল ঠিকাদারের মারমুখী আচরণ ও অনৈতিক চাপের বিষয়টি। সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী ঠিকাদারদের বিল প্রদানের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া থাকলেও চটগ্রাম ওয়াসার কতিপয় ঠিকাদার সেই সময় দিতে নারাজ। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবু সাফায়াত মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম বলেন, সরকার ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ দেখা আমার দায়িত্ব। আমি বিধিবিধান মেনেই কাজ করি। কারও কোনো অনৈতিক চাপে আমি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী কাজ করতে পারি না। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানে অসাধু ঠিকাদাররা উড়ো চিঠি দেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মকসুদ আলম বলেন, বড় বড় কিছু ঠিকাদার আছেন যারা বিল দেওয়া মাত্রই তা পাশ করাতে উঠেপড়ে লাগেন। ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের সঙ্গে এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। চট্টগ্রাম ওয়াসা ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনসুরুল হক বলেন, কিছু ঠিকাদারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকে। তাই তারা নিচের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেয়ার করেন না। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এম. জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী এম. জামাল বলেন, আমি ওয়াসার ভবন নির্মাণের প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ যথাসময়ে শেষ করে গত বছরের জুনে বুঝিয়ে দিয়েছি। বিলও নিয়েছি। বিল আদায় বা ফাইল স্বাক্ষরের জন্য ওয়াসার কর্মকর্তার দরজায় লাথি মারা, হুমকি-ধমকি দেওয়া, অশোভন ব্যবহার করার অভিযোগ সত্য নয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে তো আমার নলেজে থাকত। তারপরও আপনি যখন বলছেন আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।