ভোররাতে ঘরে আলো জ্বালানোর মতো তুচ্ছ ঘটনায় চাচা-ভাতিজাকে পিটিয়ে হত্যার পর একজনকে খুন করে অপরজন আত্মহত্যা করেছে বলে নাটক সাজানো হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর কদমতলীর ‘কথা এন্টারপ্রাইজ প্রেসের’ শ্রমিক সোহেল মিয়া ও তার প্রতিবেশী ইকবালকে হত্যা করে একই প্রেসের কয়েকজন শ্রমিক। ছয় বছর পর পুলিশ বু্যূরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ওই জোড়াখুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। বুধবার ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার জানান, এ জোড়া খুনের ঘটনায় প্রেসের ১২ কর্মচারী জড়িত। তাদের সঙ্গে সহযোগী নুর আলম ও বাদল যুক্ত হয়েছিল। এ দুজনসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নুর আলম ও বাদল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা জানায়, ইকবাল পরহেজগার ছিলেন। কক্ষে লাইট জ্বালিয়ে তিনি ফজরের নামাজ পড়তেন। এ নিয়ে অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন রাত ৩টা দিকে প্রথমে আবদুর রহমানের সঙ্গে ইকবালের ঝগড়া, হাতাহাতি ও মারামারি হয়। এ সময় অন্য কর্মচারীরা একজোট হয়ে ইকবালকে মারধর করে। চাচা ইকবালকে রক্ষা করতে ভাতিজা সোহেল এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। চাচা-ভাতিজাকে পিটিয়ে হত্যার পর প্রচার করা হয়-ভাতিজা সোহেলকে হত্যার পর অপরাধ বোধে চাচা ইকবাল আত্মহত্যা করেছে। এর আগে প্রেসের কর্মচারী জামাল তার পূর্বপরিচিত নুর আলম ও বাদলের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা চুক্তি করে পিকআপে ইকবালের লাশ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি গাছে ঝুলিয়ে রেখে আসে। চাচা-ভাতিজাকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রেস শ্রমিকরা এ নাটক সাজায়। সোহেলের পরিবারকে প্রেস শ্রমিকরা জানায়, তাকে পিটিয়ে হত্যার পর ইকবাল পালিয়ে গেছেন। ছয় বছর আগের চাচা-ভাতিজা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে পিবিআই রহস্য ভেদ করেছে। তদন্ত সংস্থাটি বলছে, কদমতলীর ‘কথা এন্টারপ্রাইজ প্রেসে’ টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার ঘুনিপাড়া গ্রামের সোহেল মিয়া ও তার প্রতিবেশী চাচা ইকবাল চাকরি করতেন। প্রেসের মেসে অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে তারা থাকতেন। প্রচণ্ড মারধরে গুরুতর আহত সোহেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুদিন পর মারা যায়। এ ঘটনায় সোহেলের ছোট ভাই সাইদুর রহমান কদমতলী থানায় ইকবালকে আসামি করে মামলা করেন। এদিকে ঘটনার চারদিন পর রূপগঞ্জের বরপা এলাকার বিক্রমপুর স্টিল মিল ফ্যাক্টরির দেয়ালঘেঁষা গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ইকবালের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন প্রেসের কর্মচারীরা প্রচার করে ভাতিজাকে হত্যার পর অনুতপ্ত ও অপরাধ বোধে আত্মহত্যা করেছে ইকবাল। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়। সোহেল হত্যা মামলায় ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ইকবাল মারা যাওয়ায় তাকে হত্যার দায় থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়। এদিকে ইকবালের ঝুলন্ত লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনার মোড় নিতে শুরু করে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ইকবাল হত্যার শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ইকবালের স্ত্রী প্রেসের ১০ কর্মচারীকে আসামি করে ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। আট আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ২০১৮ সালের ২২ মে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিট মামলার তদন্তভার পায়। ইকবাল ও সোহেলের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দেখতে পান-দুজনের মৃত্যু হয়েছে কাছাকাছি সময়ে।