অভাব আর কষ্টে চলছিল জুয়েলের পাঁচ সদস্যের সংসার। বাবার দিনমজুরের কাজ করে কোনো মতো চলছিল টানাটানির সংসার। চতুর্থ শ্রেণি পড়া অবস্থায় হঠ্যৎ দিনমজুর বাবা হাসান মোল্লা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারে দেখা দেয় অভাব আর দারিদ্রতা। পরে চার সদস্যের পরিবারের খরচ মিটাতে বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরেন জুয়েল। ভাই-বোন আর নিজের পড়াশোনার খরচ যোগানো ছিল খুবই দূর্সাধ্য। তবুও শত অভাব আর কষ্টের মধ্যে পড়াশোনা বাদ দেননি। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার আর নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও শত বাঁধা পাড় করা সেই জুয়েল এবার সদ্য প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসে প্রকৌশলী ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। জুয়েল আলী নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দক্ষিণ লালপুর গ্রামের মৃত হাসান মোল্লার ছেলে। জুয়েল আলী লালপুর শ্রীসুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও লালপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে রাজশাহী প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। জুয়েলের মা জামেলা বেগম জানান, অভাব আর দরিদ্র সংসারে স্বামীর উপার্জনে কোনো মতে সংসার চলছিল। কিন্তু হঠ্যৎ একটি স্বামী মারা যায়। সংসারের হাল ধরতে আমার ছেলে জুয়েল রাজমিস্ত্রী আর টিউশুনি করিয়ে সংসার ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে। মাধে মাঝে অর্থাভাবে বার বার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় ভালো রেজাল্ট করার কারণে সহযোগিতা পাওয়ায় সেই সব টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছে। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছে। আজ তার কষ্টের দিনগুলো তার এখন শেষ হয়েছে। আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। অপ্লুত হয়ে জুয়েল আলী বলেন, ৮ বছর বয়সে আমার বাবা মারা যান। তারপর পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সেই বয়সেই মায়ের পাশাপাশি আমাকেও সংসারে হাল ধরতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়েছে। কয়েকবার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষকদের সহযোগিতায় আবারও পড়াশোনা শুরু করি। অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি, এসএসসি ও এইচএসসিতে এ প্লাস পাওয়ার পর থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংক ও প্রার্কীতি ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি পেয়েছিলাম। এই বৃত্তির মাধ্যমে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছি। তিনি আরও বলেন, একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন ছিল। চাকরি করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটাবো। আজ আমার সে স্বপ্ন বাঁচতবে পূরণ হয়েছে। আমার জন্য সকলে দোয়া করবেন। আমি যেন সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারি। প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নুরিয়া পারভীন জানান, জুয়েল একজন খুবই গরীব পরিবারের মেধাবী সন্তান। সে অনেক কষ্ট করে আজ বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি সে যেন সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে।