পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর যেন পুরোপুরি ঠাণ্ডা পাকিস্তান রাজনৈতিক অঙ্গন; যা শুধু অবিশ্বাস্যই নয়, অবাক করার মতো ঘটনা। এর আগে গত ৯ মে ইমরান খানকে আটকের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। তবে এবার তা হয়নি। খবর বিবিসির। তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এই নেতা এখন কারাগারে আছেন। তোশাখানার মামলায় ইসলামাবাদের আদালত শনিবার তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর লাহোরের জামান পার্ক থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। গত ৯ মে ইমরানকে গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে তার সমর্থকেরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন; কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। সামাজিক যোগোযাগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজপথ। কোথাও ইমরানের পক্ষে জোরালো অবস্থান কিংবা বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু কী এমন ঘটেছে যে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান এমন কোণঠাসা হয়ে পড়লেন? গ্রেফতারের আগে টুইটবার্তায় সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছিলেন ইমরান। বলেছিলেন- সমর্থকেরা যেন ঘরে বসে না থাকেন; কিন্তু তার সেই অনুরোধ কার্যত সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে পারেনি। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে? ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর কেন আগেরবারের মতো বিক্ষোভ হলো না, সরকারের একাধিক মন্ত্রীর কাছে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা বলছেন, জনগণ এখন আর ইমরান খান কিংবা তার দলকে চান না। তাছাড়া মে মাসের মতো সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়াতে চান না পিটিআইয়ের সমর্থকেরা। বিবিসি বলছে, মে মাসে ইমরান গ্রেফতার হওয়ার পর সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনে হামলা চালায় তার সমর্থকেরা। এরপর নড়েচড়ে বসে সেনাবাহিনী। শুরু হয় ইমরানের সমর্থকদের ধরপাকড়। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তোলা হয় সামরিক আদালতে। মে মাসে ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ার পর সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকেরা। এরপর থেকেই গণমাধ্যমে ইমরান খানের নাম নেওয়া, ছবি দেখানো বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, টেলিভিশনের স্ক্রলেও ইমরানের নাম লেখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অনেক সমর্থক। কিন্তু গত শনিবার ইমরান গ্রেফতার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি। কিছু নেতা পোস্ট করলেও পরে সেটি আবার মুছে ফেলেছেন। এমনকি ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ টেলিভিশনেও তেমন একটা দেখা যায়নি। যদিও পাকিস্তান সরকার দাবি করেছে, তারা শান্তিপূর্ণ কোনো আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেনি; কিন্তু বিবিসি উর্দুর সাংবাদিকেরা দেখেছেন, শনিবার লাহোরে ইমরান খানের বাসভবন জামান পার্কের সামনে অনেক পিটিআই সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেছেন, তারা শতাধিক পিটিআই সমর্থককে গ্রেফতার করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ইমরানের সমর্থকেরা যেন কোনো ঝামেলা বাধাতে না পারে, সেজন্য তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, ব্যাপক ধরপাকড় ইমরান খানের সমর্থকদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। গত ৯ মে আমরা যেমন দেখেছিলাম, এবার ইমরানের সমর্থকেরা নিজেদের সেই ঝুঁকিতে ফেলতে চাচ্ছে না।’ মাইকেল কুগেলম্যান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা এই নৃশংস কৌশলগুলো ব্যবহার করেছিল। ফলে ইমরান খানের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল।’