সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও বিপজ্জনক হবে বলে মনে করছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সোমবার সংবাদ সম্মেলন ও পৃথক বিবৃতিতে দলগুলো বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন যদি ভিন্নমত দমন, মুক্ত সাংবাদিকতায় বাধা ও নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে মর্মবস্তুগতভাবে একইরকম থাকে তা কোনোভাবেই মানুষ গ্রহণ করবে না। দেশি-বিদেশি চাপে ‘আইওয়াশ’-বিএনপি : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও ভয়ংকর ও বিপজ্জনক হবে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তাদের হাত দিয়ে ভালো কিছু হবে বলে মনে করি না। দেশি-বিদেশি চাপে তারা আইওয়াশ হিসাবে এটি করেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও ভয়াবহ ও বিপজ্জনক হবে। সোমবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এই আইনও বাকস্বাধীনতা খর্ব করবে-ইসলামী আন্দোলন : এক বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকলে মনে যত ভয়। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তার চেয়েও সাইবার নিরাপত্তা আইন আরও ভয়ংকর ও বিপজ্জনক হতে পারে। আসলে সবই বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার নামান্তর। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার দেশি-বিদেশি চাপে আইওয়াশ হিসাবে সাইবার নিরাপত্তা আইনটি করেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার যা যা করার তাই করছে। ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান কারাদণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর-নাগরিক ঐক্য : এক বিবৃতিতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য কারাদণ্ডের বিধান পরিবর্তন করে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান এবং জামিন অযোগ্য ধারা পরিবর্তন করে জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন এই আইনে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব নেই। যাদের নাম বা পদের পেছনে সাংবাদিক তকমা নেই তাদের কী হবে? তাদের কি জামিন হবে? তাদের কারাদণ্ডের বিধান কি থেকে যাবে? দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান কারাদণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর। সেই ভয়েই দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে থাকবে। নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস-বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি : এক বিবৃতিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস’ হলে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনও দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন যদি ভিন্নমত দমন, মুক্ত সাংবাদিকতায় বাধা ও নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে মর্মবস্তুগতভাবে একইরকম থাকে তা কোনোভাবেই মানুষ গ্রহণ করবে না। নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পোশাক বদল নয়, দরকার জনগণের মত প্রকাশের স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতা, গবেষণা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার পরিপন্থি সব ধারা-উপধারা বাতিল করা। ভিন্ন নামে নিবর্তনমূলক আইন জনগণ মানবে না-রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন : ভিন্ন নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা অন্য কোনো নিবর্তনমূলক আইন জনগণ মানবে না বলে মনে করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রীতম দাশ স্বাক্ষরিক এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের পাঁয়তারা করছে সরকার। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, নতুন কোনো নিবর্তনমূলক আইন করার পাঁয়তারা করলে জনগণ তা বরদাশত করবে না। যদি সরকার জনমতের তোয়াক্কা না করে এমন কোনো আইন প্রণয়ন করতে চায়, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে।