সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া স্বাধীন সাংবাদিকতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়

প্রকাশিতঃ অগাস্ট ৮, ২০২৩ | ৯:৩১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সম্পাদক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। একই সঙ্গে তারা সাইবার সিকিউরিটি নামে নতুন আইনটি যাতে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সাংবাদিক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি বাতিলের। সরকার দেরিতে হলেও এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ। তবে এর বিপরীতে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে আলাদা যে নতুন আইন করার কথা বলছে সরকার, সেখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অনেক ধারা-উপধারা যুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে, যা সত্যিই উদ্বেগের। প্রস্তাবিত সাইবার সিকিউরিটি আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতা যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠ যাতে রোধ না হয়-সে বিষয়টি মাথায় রাখা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তারা। সোমবার দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক এবং এডিটর্স গিল্ডের সভাপতি, ৭১ টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এ প্রসঙ্গে বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, বিশেষ করে মুক্ত পরিবেশে কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কয়েক বছর ধরে আমরা সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক সমাজ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি। স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করে, বাধাগ্রস্ত করে-এই আইনটির ধারা-উপধারা বাতিল, পরিবর্তন কিংবা সংশোধনেরও দাবি জানিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অবশেষে তারা এই আইনটি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। তিনি আরও বলেন, তবে আমাদের স্বস্তিটা এখনো সম্পূর্ণ নয়। কেননা আমরা জানি না সাইবার সিকিউরিটি নামে নতুন আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করতে আবার কী কী ধারা যুক্ত করা হচ্ছে বা হবে। কী কী ধারা থাকল কিংবা থাকল না। আসলে যতদিন পর্যন্ত না আমরা পূর্ণাঙ্গ এই আইনটা দেখছি, ততদিন পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে আমরা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারব না। এজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অবশেষে সরকার এই আইন পরিবর্তন করেছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ। তবে যতটুকু জানি সরকার সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে নতুন আরেকটি আইন করতে যাচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অনেক কিছু এই আইনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। এখানে নতুন করে কী কী অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে-তা আমরা এখনো জানি না। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখার কথা শোনা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের বিষয়ে কোনো আইন প্রণয়ন করতে হলে অবশ্যই বিএফইউজেসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মতামত নেওয়া প্রয়োজন, আলোচনা করা প্রয়োজন। কারণ তারাই এক্ষেত্রে বড় অংশীজন। স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয় এমন কোনো আইন করা হলে অবশ্যই আমরা এর প্রতিবাদ জানাব। এডিটর্স গিল্ডের সভাপতি, ৭১ টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টটি নানা কারণেই বিতর্কিত। মনেই হয়েছিল এই আইনটি কেবল গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে। পুলিশসহ প্রশাসনের কাছেও এমন বার্তা ছিল। যে জন্য তারা কারণে-অকারণে গণমাধ্যমকর্মীদের এই আইনে হয়রানি করেছে। তাই আমরা আইনটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছি। আমরা সব সময় বলেছি, সাইবার বুলিং ঠেকাতে একটি আইন প্রয়োজন। অপরাধ, অপপ্রচার এবং গুজব বন্ধে আইন প্রয়োজন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে ইচ্ছে হলো একজনের বিরুদ্ধে যা খুশি লিখে দিলাম, প্রচার করলাম-এটা বন্ধে অবশ্যই আইন প্রয়োজন। সরকার দেরিতে হলেও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পরিবর্তন করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে নতুন একটি আইন করতে যাচ্ছে-এজন্য তাদের ধন্যবাদ। তবে এই আইনেও যাতে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠ রোধ করার কোনো বিধিবিধান যুক্ত না করা হয়-সেদিকে সরকারকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।