পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে তিনি এ আলোচনা শুরু করেছেন। এর আগে বুধবার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। খবর, ডন, দ্য নিউজ, জিও নিউজের। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে ১৫তম জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে ‘এক্স’-এ দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় পরে জানানো হয়, সংবিধানের ৫৮-১ ধারায় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারই জাতীয় নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। তাই প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালেই বিরোধীদলের প্রধান রাজা রিয়াজকে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফই এ দায়িত্ব পালন করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের নাম চূড়ান্ত করতেই বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিরোধী দলের প্রধানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে রাজা রিয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত নামগুলো আমাকে দেওয়া হবে। আমার প্রস্তাবিত নামগুলোও তাকে দেব। আগামীকাল এ নিয়ে আমরা আবার আলোচনায় বসব। প্রস্তাবে কাদের নাম এসেছে, তা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় ছয়জনের নাম এসেছে। তারা সবাই সম্মানিত ব্যক্তি। কালকের বৈঠকের পর সবকিছু স্পষ্ট হবে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে পাকিস্তানের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এছাড়া তিনি ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। শাহবাজ শরিফ এর আগে জানিয়েছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার তিনি পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন, তাদের বৈঠকে উভয় পক্ষ থেকে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে এরই মধ্যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি তাসাদুক হোসাইন জিলানির নাম প্রস্তাব করেছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং সিন্ধুর গভর্নর কামরান তেসোরির নাম প্রস্তাব করেছে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)। তবে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) কোনো নাম প্রস্তাব করেনি। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরোর নামও বিবেচনায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নামের বিষয়ে একমত হতে না পারলে বিষয়টি সংসদীয় কমিটিতে যাবে। আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা তাদের পছন্দের নাম সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবেন। সংসদীয় কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করতে হবে এবং যদি এ কমিটিও ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) দুই দিনের মধ্যে বিরোধী দল এবং সরকারের প্রস্তাবিত নাম থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবে। এ বছর নভেম্বরে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশে নতুন আদমশুমারির কাজ শুরু হওয়ায় ভোট কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। আদমশুমারি শেষ করতে এবং নতুন নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ করতে প্রায় চার মাস সময় লাগতে পারে বলে এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিদায়ি সরকারের আইনমন্ত্রী। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা কুনওয়ার দিলশাদ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এর অর্থ, নভেম্বরে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেটা অন্তত কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে।