সরকারিভাবে দাম কমানো হলেও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনসহ কোথাও এর প্রভাব নেই। সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না চিনি ও ভোজ্যতেল। আগের মতো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। এদিকে চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণের প্রভাবে সবজির দামে আগুন। প্রতি কেজি ৭০ টাকার কমে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দামও আকাশচুম্বী। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা আগের কেনা চিনি ও ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন। ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তদারকির অভাবে সরকারের নির্দেশনা মানছেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের আমদানি মূল্য কমে যাওয়ায় নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে খোলা সয়াবিন তেল ১৫৪ টাকা, বোতলজাত ১৭৪ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ২৩ টাকা কমিয়ে ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একইভাবে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেজিতে ৫ টাকা কমিয়ে খোলা চিনির দাম ১৩০ ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পরদিন ১৪ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও কার্যকর হয়নি। সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমানো হলেও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ৮৫০ টাকা বিক্রি নির্দেশনা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। নগরীর বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩৫-১৪০ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, কোম্পানিগুলোর দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও খুচরা বাজারে নতুন দরের তেল পেতে অন্তত এক সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। এছাড়া কোম্পানির কারসাজির কারণে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সব সময় ক্রেতাদের কাছে নাজেহাল হচ্ছি। কেননা ক্রেতারা দোকানে এসেই নতুন দরের তেল চান। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ-সরকার দাম বাড়ালে ব্যবসায়ীয়রা মিনিটের মধ্যে কার্যকর করে। আর দাম কমালে দিনের পর দিনও কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করারও কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন নির্ধারিত দামের ভোজ্যতেল বাজারে এখনও আসেনি। ফলে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দাম বেড়েছে ভোগ্যপণ্যেরও। খুচরা বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা কেজি। আর নিুমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দরে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ২৩০-২৩৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা, যা সাত দিন আগে ৩০০ টাকা ছিল। আর আমদানি করা হলুদ বিক্রি হয় ২৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ২৩০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা ও আমদানি করা আদা ২২০ টাকা, আর প্রতি কেজি শুকনো মরিচ ৪৫০-৫০০ টাকা বিক্রি হয়। ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি রাখা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। নগরীর খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে প্রতি পিস ডিমের দাম হয় ১৩ টাকার বেশি। খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার মো. মুহিবুল্লাহ জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ফলে বাজারে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে। বাজারদর : দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যার প্রভাব সবজির বাজারে এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও সরবরাহ কম থাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। বাজারে শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০, শসা ৮০, ক্ষিরা ১২০, গাজর ১৫০, টমেটো ১৬০ থেকে ১৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০, পটোল ৬০, করলা ৭০, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০, কাঁকরোল ৮০, লাউ ৫০ ও কচুর ছড়া ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৮০-৮০০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা ও তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হয় ৪৫০-৫০০ টাকা। আর প্রতি কেজি আইড় মাছ ৮০০ টাকা, দেশি ছোট চিংড়ি মাছ ৮০০-৯০০ টাকা, কাঁচকির গুঁড়া ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি হয়। আধা কেজি থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা এবং এক কেজির চেয়ে কিছুটা কম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।