নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে এমন দেশ নিয়ে আপত্তি তোলে ভারত

প্রকাশিতঃ অগাস্ট ২৫, ২০২৩ | ১১:১১ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শেষ মুহূর্তের প্রস্তাবে আটকে গেছে নতুন অনেক সদস্যের অন্তর্ভুক্তি। তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হতে পারে এমন কোনো দেশকে ব্রিকসে নেওয়া যাবে না। এছাড়া ব্রিকস সম্প্রসারণে চীনের উদ্দেশ্যের সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা। এসব নানা কারণে এবারে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে শেষ মুহূর্তে নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ‘ব্রিকস এক্সপ্যানসন ফেসেস ইলেভেনথ আওয়ার হার্ডল অ্যাজ ডিভিশন্স পারসিস্ট’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স লিখেছে, বুধবারের সামিটে ব্রিকসের সম্প্রসারণ নিয়ে শেষ মুহূর্তের অচলাবস্থা বিশ্ব পরিমণ্ডলে ‘গ্লোবাল সাউথ’কে আরও প্রভাবশালী করার আকাঙ্ক্ষাকে হুমকিতে ফেলেছে। বর্তমানে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক জোট হচ্ছে ব্রিকস (ইজওঈঝ)। কয়েক ডজন দেশ এতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে একটি পালটা ব্যবস্থা হিসাবে ব্রিকসকে গড়ে তুলতে আগ্রহী বেইজিং ও মস্কো। জোহানেসবার্গের এই ৩ দিনের সামিটে ব্রিকসকে সম্প্রসারণের আলোচনাই ছিল শীর্ষ এজেন্ডা। এর সব সদস্যও প্রকাশ্যে ব্রিকস সম্প্রসারণের ব্যাপারে সমর্থন ব্যক্ত করলেও নতুন সদস্যের সংখ্যা এবং কত তাড়াতাড়ি নেওয়া হবে তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। সামিটের আয়োজক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডোর বুধবার বলেন, নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে ব্রিকস নেতারা একমত হয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত রেডিও স্টেশনকে তিনি বলেন, সম্প্রসারণের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তিনি বলেন, ব্রিকসের সদস্য হতে আগ্রহী এমন দেশগুলো আবেদন বিবেচনার জন্য আমরা কিছু গাইডলাইন, নীতি গ্রহণ করেছি। তবে ওই আলোচনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্রিকসের সদস্য একটি দেশের এমন একজন কর্মকর্তা তখন রয়টার্সকে জানান, অনুমোদন কাঠামো অনুমোদন দেওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণায় নেতারা তখনও স্বাক্ষর করেননি। বুধবারের ওই অধিবেশনের পরই এ বিষয়ে একটি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স বলছে, নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন কয়েকটি মানদণ্ড উত্থাপন করেন। এতেই ব্রিকস সম্প্রসারণ চুক্তি বিলম্বিত হয়। এ বিলম্বের বিষয়ে অবগত ভারতের এমন একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বুধবার বলেন, আলোচনা তখনও চলছিল। তিনি বলেন, মানদণ্ডের পাশাপাশি প্রার্থীদের নামের বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য ভারত চাপ দিয়েছে। রয়টার্স বলছে, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক শক্তি এবং সরকারগুলো ভিন্ন বিদেশি নীতির লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভাবে ভিন্ন। যে সংগঠন বা ব্লকের প্রতিটি সদস্যের একই সমান ভেটো ক্ষমতা রয়েছে সেখানে এটি একটি জটিল ফ্যাক্টর। এই ব্লকে সবচেয়ে হেভিওয়েট চীন পশ্চিমাদের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্রিকসকে সম্প্রসারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছে। বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, অস্থিরতা ও পরিবর্তনের নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব। ব্রিকসভুক্ত দেশ হিসাবে আমাদের সব সময় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য মনে রাখতে হবে। আর তা হলো একতার ভিত্তিতে আমাদের নিজেদের শক্তিশালী করা। ওদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর মধ্য দিয়ে তিনি পশ্চিমা শক্তিগুলোকে দেখাতে চান, বিশ্বে এখনো তার বন্ধু আছে। পক্ষান্তরে পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ব্রাজিল এবং ভারত। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডা সিলভা মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র এবং জি৭-এর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে ব্রিকস এমন ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্রিকসের সদস্য দেশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রস্তাব করা মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- যেসব দেশ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার টার্গেটে আছে তাদের সদস্য করা যাবে না। এর মাধ্যমে ইরান এবং ভেনিজুয়েলার আবেদন নাকচ হয়ে যায়। এছাড়া মাথাপিছু সর্বনিম্ন জিডিপি নির্ধারণের প্রস্তাব দেন মোদি। ওই কর্মকর্তা বলেন, নরেন্দ্র মোদি এসব বিষয় বুধবার উত্থাপন করলে এ নিয়েই কিছুটা বিভক্তি দেখা দেয়। রয়টার্সের খবরে আরও বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা বলেছেন- কমপক্ষে ৪০টি দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তার মধ্যে ২২টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ করেছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৪০ ভাগের বসবাস ব্রিকসে। বৈশ্বিক মোট জিডিপি’র এক-চতুর্থাংশের মালিক তারা। তা সত্ত্বেও ব্রিকস সদস্যদের একটি সুসঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে মীমাংসা করতে ব্যর্থতা আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ‘প্লেয়ার’ হিসাবে এটি ক্রমশই নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান মঙ্গলবার বলেছেন, জটিল বিষয়ে ব্রিকস সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে তিনি এই ব্লক যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন না। তবে ব্রিকসের সম্প্রসারণ এবং বহুজাতিক ঋণদাতা হিসাবে বিকল্প নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা অনেকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।