দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যা বাড়ছে। ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উঠতে যাচ্ছে ছোট-বড় ও নতুন-পুরাতন মিলে ৩২টি প্রকল্প। এটি চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এগুলোর মধ্যে একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে ২০টি প্রকল্প। এছাড়া ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া শুধু মেয়াদ বাড়ানোর জন্য উপস্থাপন করা হবে পাঁচটি এবং আগেই পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন এমন সাতটি প্রকল্প (৫০ কোটি টাকার নিচে ব্যয়) অবগতির জন্য তোলা হবে। এর আগে গত পাঁচটি একনেক বৈঠক মিলে অনুমোদন পায় ৭১টি প্রকল্প। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান শনিবার বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা গত প্রায় দেড় মাস ধরে একনেক বৈঠক হয় না। নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলে ৫টি বৈঠক হয়ে যেত। তাহলে এত প্রকল্প জমা হতো না। এখন তো সামনে নির্বাচন। আপনার (সাংবাদিকরা) যদি বলেন, নির্বাচনের কারণে এত প্রকল্প তাহলে তো কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, আমি প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কোনো হস্তক্ষেপ করি না। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রক্রিয়াকরণের পর যে সুপারিশ পাঠায়, সেগুলোই একনেকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সূত্র জানায়, ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় একনেক বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই একনেকে অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্প রয়েছে ছয়টি। এছাড়া ভৌত অবকাঠামো বিভাগের পাঁচটি, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের পাঁচটি এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের চারটি প্রকল্প রয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধির তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পাঁচটিই ভৌত অবকাঠামো বিভাগের। সেইসঙ্গে একনেকে অবগতির জন্য যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রকল্প রয়েছে চারটি এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রকল্প আছে তিনটি। গত কয়েকটি একনেক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যা বাড়ছে। ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৫টি প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০ জুন অনুমোদন দেওয়া হয় ১৬টি প্রকল্প। এগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ হাজার ৩৬২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর আগে ৬ জুন অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এছাড়া ১১ এপ্রিল অনুমোদন দেওয়া হয় ১১ট উন্নয়ন প্রকল্প, এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ৪ এপ্রিল অনুমোদন দেওয়া হয় ১১টি প্রকল্প, এগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ২৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এদিকে ২৯ আগস্ট একনেক উঠতে যাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে, স্মল হোল্ডার অ্যাগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি)। এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়। ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স স্মল স্কেল ওয়াটার রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট। মেঘনা নদীর ভাঙন হতে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার নলের চরে নির্মিত অবকাঠামো রক্ষার্থে প্রতিরক্ষামূলক কাজ। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পারের উন্নয়ন ও সুরক্ষা (প্রথম পর্যায়)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম নির্মাণ। বাগেরহাট কালেক্টরেটের নতুন ভবন নির্মাণ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক আধুনিকীকরণ। পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়ক হতে মাদানী এভিনিউ পর্যন্ত সংযোগকারী দুটি সড়ক উন্নয়ন। সিলেট সড়ক বিভাগাধীন সিলেট (তেলিখাল)-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কে বড় ভাঙা সেতু নির্মাণ। মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতায় রামেরকান্দা-লাকিরচর সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। আরও আছে এস্টাবলিস্টমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল ও এন্সিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট-২) : দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং লিভিং নো অব বিহাইন্ড : ইমপ্রুভিং স্কিল অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচ্যুনেটিস ফর দ্য ইউমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার প্রজেক্ট। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী এর আগে বলেন, হঠাৎ করে এত প্রকল্প অনুমোদন এবং গ্রামীণ অবকাঠামোয় বিশেষ নজর দেওয়াটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বলা যায়। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এসব প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয় বলে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। এজন্য পরে অর্থ অপচয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফলও পাওয়া যায় না।