বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতীয়বর্ষের এক ছাত্রীর র্যাগিংয়ের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সংবাদকর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। শনিবার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর কলেজ হোস্টেল সুপারসহ দুই চিকিৎসক হামলা করেন। পরে তাদের সঙ্গে কলেজের ৫০তম ব্যাচের এক ছাত্র যোগ দেয়। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের নেতারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এদিকে, র্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রীকে কলেজ কর্তৃপক্ষ মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসাবে দাবি করলেও পরিবার বিষয়টিকে পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট হিসাবে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার কলেজ হোস্টেলে আবাসিক ছাত্রী নুজহাত খান র্যাগিংয়ের শিকার হন। তার ওপর হোস্টেলের সেক্রেটারি ও বিডিএসের ছাত্রী ফাহমিদা রওশন প্রভা এবং সহকারী সেক্রেটারি ও ৫০তম ব্যাচের ছাত্রী নীলিমা হোসেন জুঁই নির্যাতন চালান। এর বিচার চাইতে শনিবার সকালে ওই ছাত্রী ও তার মা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে যান। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা, চিত্র সাংবাদিক রুহুল আমিন, সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ, ফটোসাংবাদিক সুমন হাসান, এশিয়ান টেলিভিশনের রিপোর্টার ফিরোজ মোস্তাফা ও চিত্র সাংবাদিক আজিম শরিফ যান। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে ভুক্তভোগীরা বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রথমে চড়-থাপ্পড়, পরে চেয়ার দিয়ে পেটায় হোস্টেল সুপার ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সাহা এবং কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. সৈয়দ বাকী বিল্লাহ। রুম থেকে সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে ওই ছাত্রী ও তার মাকে আটকে রাখে দুই চিকিৎসক। কলেজের ছাত্রদের ডাক দিয়ে তারা সাংবাদিকদের মারধরের নির্দেশ দেন। তখন ৫০তম ব্যাচের ছাত্র আজিম তাদের মারধর করেন। হামলার শিকার চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের স্টাফ রিপোর্টার কাওছার হোসেন রানা জানান, র্যাগিংয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় হঠাৎ করেই ডা. বাকী ও ডা. প্রবীর হামলা চালান। ক্যামেরা ও ট্রাইপড ভাঙচুর করা হয়। সময় টিভির রিপোর্টার শাকিল মাহামুদ বলেন, আমাদের কাছে ওই ছাত্রী ঘটনার বর্ণনা দেওয়া শুরু করলে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের ক্যামেরাপারসন রুহুল আমিনের ওপর হামলা করে, তাকে চেয়ার দিয়ে পেটান। ওই ছাত্রী ও তার পরিবারকে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়। এশিয়ান টেলিভিশনের বরিশাল প্রতিনিধি ফিরোজ মোস্তফা বলেন, তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী নুজহাতকে নির্যাতন করা হয়েছে-এমন খবর পেয়ে আমরা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যাই। ওই ছাত্রীর বক্তব্য নেওয়ার সময় র্যাগিংয়ের ইন্ধনদাতা ছাত্রী হোস্টেল সুপার ডা. প্রবীর আমাদের ওপর হামলা চালান। এ সময় তার সহযোগী ছিলেন ডা. বাকী। এরপর ছাত্রদের ডেকে তারা আমাদের ওপর হামলা করার নির্দেশ দেন। এছাড়া হামলা করার জন্য ইন্ধন দেন ছাত্রী নির্যাতনকারী নীলিমা হোসেন জুঁইয়ের স্বামী ডা. আতিক। সাংবাদিক ফিরোজ মোস্তফা আরও বলেন, হোস্টেল সুপার ডা. প্রবীর সাহার বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। তার নানা অপকর্মের কথা ছাত্রীরাই জানিয়েছেন। এদিকে, র্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী নুজহাতের মা সাংবাদিকদের বলেন, আমার মেয়েকে প্রচণ্ড নির্যাতন করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমার মেয়েকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা পুরোপুরি মিথ্যা। র্যাগিংয়ের ঘটনাকে অন্যদিকে নিতে এমনটা করা হচ্ছে। বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, যারা মানুষকে চিকিৎসা দেবে, যারা নতুন চিকিৎসক তৈরি করবে-তারাই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে নিজেদের দোষ ঢাকতে। সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা ন্যক্কারজনক। এর আগে বরিশাল মেডিকেলে একাধিক র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশের মধ্যস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক নেতারা আলোচনায় বসেন। এরপর হামলার শিকার সাংবাদিকদের কাছে হামলাকারী দুই চিকিৎসক নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার বলেন, ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই ছাত্রীর পরিবার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে। তিনি বলেন, ওই ছাত্রী মানসিক বিকারগ্রস্ত। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, দুই পক্ষকে বসিয়ে বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে।