আগামী মাসে সরকার পতনের চূড়ান্ত ও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পকিল্পনা করছে বিএনপি। গত দেড় দশকের সব আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এবার সফল হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে দলটি। এমনই সময় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অসুস্থতার তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সাজার কারণে রাজনীতির বাইরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন তিনি। চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দেশ ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। দেশে যারা দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন তাদের বড় অংশ এখন অসুস্থ। দলের স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত ২৭ জুন থেকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৪ আগস্ট চিৎিসার জন্য গেছেন সিঙ্গাপুরে। সর্বশেষ শনিবার চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর গেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। চিকিৎসাজনিত কারণে বেশ অনেক দিন আগে থেকেই থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। চিকিৎসার কাজে দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। শীর্ষ এই পাঁচ নেতা চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন তা দলের দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতা ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। মোশাররফ পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ প্রবীণ এই নেতা। দ্রুত সময়ের মধ্যেই দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে নিয়মিত চেপআপ শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফেরার কথা রয়েছে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলার আলমগীরের। মির্জা আব্বাস কবে নাগাদ ফিরবেন তা আরও ২-১ দিন পরে জানা যাবে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মামলায় সাজা হওয়ার কারণে বিদেশে গেছেন রাজনৈতিক মহলের এমন আলোচনা থাকলেও দলের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে জানা যায় তিনিও বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর চিকিৎসার কাজে দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে অবস্থান করছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের মার্চে ভারতের শিলং আদালত তাকে খালাস দিলে কিছুদিন পর তিনি দিল্লি যান। এসব নেতাদের বাইরে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। গত মে মাসে স্ত্রী নুর আকতারকে হারান জমিরউদ্দিন। এরপর থেকে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে টানা শয্যাশায়ী রফিকুল ইসলাম মিয়া। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডক্টর আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা দেশের বাইরে যাওয়ার নেতার্মীদের উদ্বেগ বাড়ছে। এ নিয়ে দলটিতে ইতিবাচক আলোচনার পাশাপাশি নেতিবাচক আলোচনাও আছে। অনেকে বলছেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কর্মসূচিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা বেশি থাকার সম্ভাবনা থাকায় আগেই শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে চান নেতারা। শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ হয়েই নেতারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবনে। আবার অনেকে বলছেন এমন সময়ে বিদেশে গিয়ে অসুস্থতহার অজুহাতে প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে চাইছেন তারা। সিনিয়র নেতারা দেশের বাইরে থাকায় আন্দোলন কর্মসূচিতে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আন্দোলন চলছে। নেতারা নানা কারণে দেশের বাইরে রয়েছেন। আন্দোলনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। চলতি সপ্তাহে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে।’