জি-২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ভারতকে ‘গ্লোবাল সাউথের নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে তার দেশ ‘গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত আগস্টে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় জানিয়েছিলেন তার লক্ষ্য ‘গ্লোবাল সাউথের এজেন্ডাকে অগ্রসর করা’। চলতি বছরের মে মাসের জি-৭ এর সম্মেলনের আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গ্লোবাল সাউথের গুরুত্ব প্রতিফলনে জোর দিতে অতিথি দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাংক এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন- সকলের মুখে মুখেই এখন মোদির গ্লোবাল সাউথ। গ্লোবাল সাউথ কি? কোন ভৌগলিক শব্দ নয় গ্লোবাল সাউথ। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে ভারত, চীনসহ উত্তর আফ্রিকার প্রায় অর্ধেক দেশ। অন্যদিকে দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া অথবা নিউজিল্যান্ডের মত দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত নয়। ১৯৮০-এর দশকে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ড্ট মাথাপিছু জিডিপির উপর ভিত্তি করে উত্তর-দক্ষিণ বিভাজনের একটি লাইন প্রস্তাব করেছিলেন। এর উপর ভিত্তি করেই গ্লোবাল সাউথের নাম দেওয়া হয়েছিল। নয়াদিল্লি ভিত্তিক কাউন্সিল ফর স্ট্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা হ্যাপিমন জ্যাকব বলেন, ‘গ্লোবাল সাউথ হল একই সময়ে ব্যতিক্রমসহ একটি ভৌগলিক, ভূ-রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও উন্নয়নমূলক ধারণা’। গ্লোবাল সাউথভুক্ত দেশ গ্লোবাল সাউথ শব্দটি সাধাণরত জাতিসংঘের অন্তর্গত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বোঝায়। যদিও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। আছে বেশ কয়েকটি ধনী উপসাগরীয় দেশ। কোন দেশ পূর্বে কোন উপনিবেশের অংশ ছিল কিনা অথবা কোন দেশের মাথাপিছু জিডিপি ১৫ হাজার ইউএস ডলারের উপরে কিনা-গ্লোবাল সাউথ বোঝাতে এ ধরণের মানদণ্ডও ব্যবহার করে কেউ কেউ। জাতিসংঘ বর্তমানে ১৮১টি দেশকে উন্নয়নশীল আর ৬৭ টি দেশকে উন্নত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। সেই হিসেবে গ্লোবাল সাউথভুক্ত দেশ বলতে ১৮১ দেশগুলোকেই বোঝায়। জানুয়ারিতে একটি ভার্চুয়াল ‘ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিটে’র আয়োজন করেছিলেন মোদি। সেখানে উপস্থিত ছিল ১২৫ টি দেশ। আর অনুপস্থিত ছিল চীন ও পাকিস্তানের মত ভারতের প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। গ্লোবাল সাউথ শব্দ ব্যবহারের উপযোগিতা গ্লোবাল সাউথ শব্দটি সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয় ১৯৬০-এর দশকে। যদিও তা পরিচিতি পেতে কিছুটা সময় নিয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব আর তৃতীয় বিশ্বের মত শব্দগুলোর ব্যবহারে কিছুটা আপত্তি দেখা যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দ্বিতীয় বিশ্বের অস্তিত্বই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। আর তৃতীয় বিশ্ব শব্দ ব্যবহার কিছুটা অবমাননাকর হিসেবে দেখা হয়। উন্নয়নশীল দেশ বোঝাতে গ্লোবাল সাউথ শব্দ ব্যবহারও অনেক সময় বিভ্রান্তিকর। কারণ এতে আছে চীন ও ভারতের মতো দেশ। যেখানে চীনের জিডিপি প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। আর ভারতের জিডিপি ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। কেউ কেউ চীনের ব্যাপারে আতঙ্কও প্রকাশ করে। নিজ দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এই গ্রুপকে অপব্যবহার করতে পারে বলে বলে মানে করেন অনেকে।