কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বিদেশি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাছ থেকে গ্যাস বিক্রির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চায় পেট্রোবাংলা। অর্থাৎ গ্যাস বিক্রির সব টাকা সরাসরি কাফকোর কাছ থেকে পেট্রোবাংলা গ্রহণ করতে চায়। বিপুল অঙ্কের এই টাকা পেট্রোবাংলায় চলে গেলে কেজিডিসিএল রুগ্ণ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা এখানকার কর্মকর্তাদের। ২০১০ সাল থেকেই পেট্রোবাংলা কাফকোর প্রতি গ্যাস বিক্রির পুরো টাকা পেট্রোবাংলায় জমা দিতে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। কিন্তু কেজিডিসিএল নানা ‘যৌক্তিক কারণে’ পেট্রোবাংলার এ আবদারে সায় দেয়নি। এরপরও পেট্রোবাংলা এ বিষয়ে চিঠির পর চিঠি দিচ্ছে কাফকোকে। এ নিয়ে কেজিডিজিএল’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেট্রোবাংলা পুরো টাকা নিয়ে গেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যেমন এ খাত থেকে বছরে ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে তেমনি ১৫০ কোটি টাকা লভ্যাংশ থেকেও বঞ্চিত হবে সরকার। এছাড়া এতে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড, আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডসহ বেশকিছু আইনের লঙ্ঘন হবে। বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাসের বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে মূলত কাফকোর কাছে বিক্রীত গ্যাসের টাকায়। এছাড়া অফিস ব্যবস্থাপনার কাজও কাফকোর টাকায় চলে। কাফকোর কাছে বিক্রীত গ্যাসের টাকার নিয়ন্ত্রণ পেট্রোবাংলা নিলে কেজিডিজিএল রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এছাড়া কাফকোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে কেজিডিসিএল’র। ফলে কাফকোর সঙ্গে লেনদেনের আইনগত অধিকারও কেজিডিসিএল’র। জানা গেছে, ১৯৯০ সালের সাবেক বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড (বিজিএসএল) ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কোম্পানির (কাফকো) মধ্যে সম্পাদিত গ্যাস সাপ্লাই অ্যাগ্রিমেন্ট (জিএসএ) অনুযায়ী সরকার কর্তৃক সার খাতে নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে গ্যাস সেলস অ্যান্ড পেমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট (জিএসপিএ) শিরোনামে চুক্তি নবায়ন হয়। যার আওতায় সরকার কর্তৃক সার খাতে নির্ধারিত গ্যাসের মূল্যহারের চেয়ে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি শুরু হয়। ২০১৫ ও ২০২২ সালে চুক্তিটি নবায়ন করা হয়। সরকার কর্তৃক সার খাতে নির্ধারিত গ্যাসের মূল্যহারের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ থেকে লভ্যাংশ, কর, ডিভিডেন্ড কেটে অবশিষ্ট টাকার রিস্ক প্রিমিয়াম হিসাবে ৫০ শতাংশ কোম্পানির ফান্ডে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করা হয়। এর ফলে এনবিআরকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা কর বাবদ ও সরকারকে ডিভিডেন্ড বাবদ গড়ে ১৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। ফলে কেজিডিসিএল একটি লাভজনক বাণিজ্যিক কোম্পানি হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে। জিএসপিএ অনুযায়ী কাফকোতে গ্যাস সরবরাহের ব্যর্থতায় কেজিডিসিএল’কে লিকুয়েডেট ড্যামেজ বা এলডি হিসাবে জরিমানা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু পেট্রোবাংলা কাফকোর সঙ্গে লেনদেন করলেও এ জরিমানা কেজিডিসিএল’কে পরিশোধ করতে হবে। যা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হবে। বর্তমানে কেজিডিসিএল ৬ লাখের বেশি গ্রাহকের কাছে নিরবছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করছে। এছাড়া নগরীর সব শ্রেণির গ্রাহক প্রান্তে নিরবছিন্ন গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে শহরের ৭টি ডিস্ট্রিক রেগুলেটিং স্টেশনে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেশন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শহরে ১২ কিলোমিটার, আনোয়ারা সিজিএস হতে কাফকো ও শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার উচ্চ চাপসম্পন্ন পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি সিডিএস, দুটি হাইপ্রেসার ডিআরএস ও প্রায় ১৮ কিলোমিটার উচ্চচাপ পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফৌজদারহাট-সীতাকুণ্ড-মীরসরাই শিল্প এলাকায় বিদ্যমান গ্রাহকদের স্বল্প চাপ সমস্যা নিরসনে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পই কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। কাফকোর নিয়ন্ত্রণ পেট্রোবাংলা নিয়ে নিলে এসব প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত বা বাস্তবায়নে অক্ষম হবে কেজিডিসিএল। একাধিক কর্মকর্তা জানান, পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা কাফকোর সঙ্গে ডিল করে গ্যাসের বিল আদায় করবে। গ্যাসের অর্থ সব ঢাকায় চলে যাবে। ফলে চট্টগ্রামের প্রকল্পগুলো টাকার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিজিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ নিয়ে একটি কমিটি রয়েছে। কমিটি কাজ করছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলা সমীচীন হবে না। তারপরও চেষ্টা করছি। আগের মতো রাখতে।’