সুশীল সমাজের চোখ সুদূর পশ্চিমে: সংসদে আইনমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ | ১০:২৩ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, কিছু মানুষ যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে মনে করেন, তারা নিজেদের জনগণের গার্ডিয়ান মনে করেন। নানা ডিকটেশন দেন। দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে তাকান না। তারা তাকান সুদূর পশ্চিমে। সেখান থেকে যে বাণী আসে, সেভাবে তারা এখানে সবক দেওয়ার চেষ্টা করেন। বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল-২০২৩ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে মন্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা সংক্রান্ত বিলটি উত্থাপন করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে এটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়। বিলে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের জামানত হবে ২০ হাজার টাকা। বিদ্যমান আইনে সংরক্ষিত আসন শূন্য হলে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আছে। সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। বিলে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নারী আসন বণ্টন পদ্ধতিতেও সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। এ দেশের জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে। তিনি বলেন, কিছু মানুষ যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে মনে করে, তারা নিজেদের জনগণের গার্ডিয়ান মনে করে। কিন্তু কতটুকু জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তারা নানা ডিকটেশন দেয়। তারা দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে তাকান না। তারা তাকান সুদূর পশ্চিমে। সেখান থেকে যে বাণী আসে, সেভাবে তারা এখানে সবক দেওয়ার চেষ্টা করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রিভিউ পিটিশন করা হয়েছে, গত সপ্তাহে তার শুনানি হয়েছে। উচ্চ আদালতের অবকাশ শেষে আবার শুনানি হবে। সেই শুনানিতে এর সমাপ্তি ঘটবে বলে তার বিশ্বাস। তিনি বলেন, এখন বিচারকদের পদত্যাগের বিধানটি নেই। বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদ-সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন নিয়ে একটি মানসিক সমস্যা হয়। যারা নির্বাচিত হন তাদের কোনো নির্বাচনি এলাকা আছে কিনা? এই বিষয়টি তারা বুঝতে পারেন না। এটা নিয়ে তারা নিজেরাও বিব্রতবোধ করেন। নির্বাচনে মহিলাদের বেশি সংখ্যক নমিনেশন দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যবাধকতা করা যায় কিনা- সেই প্রস্তাব দেন তিনি। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, উচ্চ আদালতের তিনজন বিচারপতিকে দুর্নীতির অভিযোগে দায়িত্ব পালন থেকে অনেক দিন ধরে বিরত রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এই বিষয়টির সুরাহা করা প্রয়োজন। একই দলের রওশন আরা মান্নান বলেন, অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মহিলারা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে নির্বাচন করে জনপ্রিয়, তাদের কি দরকার আছে সংরক্ষিত আসনের? তাদের দুর্বল বলা যায় না। মহিলারা অনেক বছর ক্ষমতায়, কিন্তু সবাইতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী কিংবা শিরীন শারমিন চৌধুরী হতে পারবেন না। আরও এক যুগে হবে কিনা, দেশে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়ানোর আহ্বান করেন তিনি। আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি অস্পষ্টতা, আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ রয়েছে। অনেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কখন ও কীভাবে নির্বাচন হবে, এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন বিএনপি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার দাপটে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। সরকার গঠনের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার, সেই সংখ্যক এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। ২০১৮ সালে অধিকাংশ জায়গায় আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। এখানেও জনমতের প্রতিফলন হয়নি।