বিধ্বংসী কোভিড মহামারির পর থেকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াই করছে পূর্ব এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়া। দিন দিন ক্ষুধার্ত হয়ে উঠছে মানুষ। অথচ অনাহারে থাকা দেশটির ‘রাজা’ কিম জং উন (সর্বোচ্চ নেতা) বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যস্ত। খাবার-পোশাক-আলিশান প্রাসাদ ছাড়াও বেহিসাবি পরিবহণ পদ্ধতির জন্যও সমালোচিত হয়েছেন বারবার। তবুও দমে যাননি। এরপরও কিনেছেন লাখ লাখ টাকার (ওন) গাড়ি, গড়েছেন বিশাল অট্টালিকা। ভ্রমণের জন্য রেখেছেন বাহারি সব যানবাহন। কী নেই সেখানেÑইয়ট, ট্রেন, সাবমেরিন, বিমান থেকে শুরু করে আস্তাবলে আছে শখের ঘোড়াও। বিলাসবহুল এসব আয়োজন কিম জং উনের ঐশ্বর্যময় জীবনধারারই প্রতিফলন। চরম দারিদ্র্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজের গড়া আয়েশি জীবনে দিন কাটাচ্ছেন। পৈতৃক সূত্রে দেশনেতা হয়ে যাওয়া কিম সত্যিই যেন এক ভ্রমণবিলাসী ‘রাজা’। বুলেটপ্রুফ ট্রেন বিদেশ ভ্রমণের জন্য কিম জং উনের একটি বিলাসবহুল ট্রেন রয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে তায়ংহো। কোরিয়ান ভাষায় যার অর্থ সূর্য। মঙ্গলবার এটিতে রাশিয়া ভ্রমণ করেন। ট্রেনটিতে একটি রেস্তোরাঁসহ বিশাল বেডরুম ও বৈঠকরুম আছে। নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু ভয়ংকর অস্ত্র রাখা আছে। রয়েছে চমৎকার ফ্রেঞ্চ ওয়াইন এবং তাজা লবস্টারের মতো খাবার পরিবেশন করা হয়। ট্রেনের মাধ্যমে দূরপাল্লার ভ্রমণের ঐতিহ্য কিম জং উনের দাদা কিম ইল সাং শুরু করেছিলেন। বিলাসবহুল ঘোড়া ২০২০ সালের খাদ্য ঘাটতির সময় রাশিয়া থেকে সাদা রঙের দুটো দামি ঘোড়া কিনেছিলেন কিম। যার একেকটির মূল্যই ছিল ১২ হাজার ডলার। ব্যক্তিগত বিমান আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য কিম জং উনের একটি ব্যক্তিগত সোভিয়েত-নির্মিত দূরপাল্লার বিমান ইলিউশিন-৬২ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার জাতীয় পাখির নামে চাম্মাই-১ নামকরণ করা হয়। অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্যে তৈরি করা হয় বিমানটি। কিম সচরাচর বিমানে না উঠলেও ২০১৮ সালে চীনে ভ্রমণের সময় তার এই ব্যক্তিগত বিমানটি ব্যবহার করেন। এছাড়াও ২০১৪ সালে কিম জং উনকে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার কোরিও-এর লোগো সংবলিত একটি ইউক্রেনীয় আন্তোনোভা-১৪৮ (এএন-১৪৮) ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এই বিমানটি উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। বিশাল ইয়ট লাল ছাদে ঢাকা কিমের সবচেয়ে বড় সুপার ইয়টটির দৈর্ঘ্য ১৯৫ ফুট (৬০ মিটার)। এর মাধ্যমে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বড় শহর থেকে দূরে পৌঁছানো যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইয়টটি বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। বিশাল ইয়টটিতে টুইন ওয়াটারস্লাইড, একটি অলিম্পিক আকারের পুল ও একটি বহুতল লাউঞ্জ রয়েছে। একটি ভাসমান বিনোদন পার্ক বলা হয়। দাম প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার। এছাড়াও দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, কিম জং উন নৌকা ও সাবমেরিনসহ বিভিন্ন পরিবহণেও চড়েছেন। বিলাসবহুল গাড়ি কিম জং উনকে বিলাসবহুল গাড়িতে ভ্রমণ করতেও দেখা গেছে। শহরের মধ্যে ভ্রমণ করার জন্য মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস-ক্লাস ব্যবহার করেন। যার দাম প্রায় ২ বিলিয়ন ওন (১.৮ মিলিয়ন ডলার)। ব্যক্তিগত টয়লেট কার কিমের একটি ব্যক্তিগত টয়লেট কারও আছে বলে জানা যায়। এটিতে বিশেষ ধরনের একটি টয়লেট ও বাথরুম রয়েছে। হেলিপ্যাড দক্ষিণ পিয়ংগান প্রদেশে কিম জং উনের লেকসাইড ভিলায় একটি হেলিপ্যাড আছে বলে জানা যায়। এটি কিমের পরিবার সদস্য বা দর্শনার্থীরা ব্যবহার করতে পারেন।