যথাসময়ে পদোন্নতি চান বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তারা

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ | ৬:৩৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

অন্য ক্যাডারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে (যথাসময়ে) পদোন্নতির দাবি করেছেন বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্যরা। এই দাবিতে তারা কিছু দিন ধরেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলছেন। সর্বশেষ বুধবার দেখা করেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে। বিভিন্ন ব্যাচের ডিআইজি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা বুধবার বিকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যান। প্রথমে তারা প্রতিমন্ত্রী ও পরে সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা জানান, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ২১২টি। কিন্তু এ পদমর্যাদায় কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা ৪২৬ জন। পদ না থাকলেও ধাপে ধাপে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের। মে-তে একসঙ্গে ১৪৪ জন যুগ্মসচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই ক্যাডারে যুগ্মসচিব পদের সংখ্যা ৫০২টি। কিন্তু কর্মরত ৯৩৬ জন। অতিরিক্ত সচিবের মতো যুগ্মসচিব পদেও পদ ছাড়াই পদোন্নতি দেওয়া হয় অনেক কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে ৪ সেপ্টেম্বর ২১১ এবং গত বছরের নভেম্বরে ১৭৫ জন উপসচিবকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অনেককেই ইনসিটু (পদোন্নতির পরও আগের পদে দায়িত্ব পালন) পদায়ন দেওয়া হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় এসপি, অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত আইজিপি পদে ৭২০ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তাব করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। এক্ষেত্রে পদোন্নতির পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ইনসিটু পদায়নেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ৫২৯ জনের তালিকা প্রস্তুত করে পুনরায় পাঠানো হয়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৯০ জনের বিষয়ে ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু ২ মাস চলে গেলেও এখনো এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার প্রতিমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে একজন পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তা বলেন, আমরা যাদের সঙ্গে দেখা করেছি, তারা আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু যথাযথ বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) পদে পদোন্নতিপ্রত্যাশী ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, পুলিশ ক্যাডারে ১৭তম ব্যাচের মাত্র একজন অতিরিক্ত আইজিপি হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ প্রশাসন ক্যাডারে ১৭ ব্যাচের বেশিরভাগই অতিরিক্ত সচিব হিসাবে গ্রেড-২-তে পদোন্নতি পেয়েছেন। পুলিশের অনেক কর্মকর্তা গ্রেড-২ (অতিরিক্ত আইজি) এবং গ্রেড-৩ (ডিআইজি) পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু তারা কবে নাগাদ পদোন্নতি পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদোন্নতির জন্য যে চাহিদাপত্র দেওয়া হয় সেটি কার্যত ফাইলবন্দি অবস্থায় আছে। প্রতিমন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিবের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজনকে এবং ডিআইজি পদে ৫০ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সম্মতি প্রকাশ করে। চাহিদার তুলনায় এত অল্পসংখ্যক পদোন্নতির প্রস্তাবে পুলিশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মে-তে এসপি থেকে অতিরিক্ত আইজি পদমর্যাদার ৭২০ জন কর্মকর্তার পদোন্নতির প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটা পুলিশ সদর দপ্তরে ফেরত পাঠায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সংখ্যা কমিয়ে পদোন্নতির সুপারিশসংক্রান্ত প্রস্তাব ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ৫২৯ জনের তালিকা প্রস্তুত করে জুনের প্রথম সপ্তাহে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাব যাচাই শেষে ২০ জুলাই ৫২৯ জনকে সুপার নিউমারি পদোন্নতি দিয়ে ইনসিটু পদায়নের সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। পরে তা পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় যাদের পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাদের মধ্যে অ্যাডিশনাল আইজি (গ্রেড-১) পদমর্যাদার ১৫ এবং একই পদে গ্রেড-২ পদমর্যাদার ৩৪ জন কর্মকর্তা আছেন। এছাড়া ডিআইজি হিসাবে ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ এবং পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১৯০ কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রথম দফায় (মে-তে) পুলিশ সদর দপ্তর যে ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতির চাহিদাপত্র দেয় সেখানে ৫০ জনই ছিলেন অতিরিক্ত আইজি। তাদের মধ্যে গ্রেড-১ পদমর্যাদায় ১৬ এবং গ্রেড-২ পদমর্যাদায় ৩৪ জন কর্মকর্তা। তাছাড়া ১৫৭ জন ডিআইজি, ২৬৬ জন অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২৪৭ জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে পুলিশের মোট জনবল ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৪। এর মধ্যে একজন আইজি (সিনিয়র সচিব), অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) দুই, অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) ২০, ডিআইজি ৮৫, অতিরিক্ত ডিআইজি ২০০, এসপি আছেন ৫৯৩ জন। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসপি থেকে অতিরিক্ত আইজি পদমর্যাদার ৫২৯ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে সুপার নিউমারি পদোন্নতির সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু ৭ আগস্ট ২৯০ জন পুলিশ কর্মকর্তার পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে এসপি ১৫০ জন এবং অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ১৪০ জন, যা চাহিদার তুলনায় কম। অন্যদিকে ডিআইজি এবং অতিরিক্ত আইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাদের ফাইলটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর যাবে তা যাবে ডিপিসি বা বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটিতে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এদিকে ১ আগস্ট পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩৪টি অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) এর সুপারনিউমারি পদ সৃজন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রধানতম বাহিনী। নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্ত পদ ও দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশ পুলিশে প্রয়োজনের তুলনায় এসব পদ অপ্রতুল। ভবিষ্যতে শুধু অবসর বা মৃত্যুজনিত শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়া হলে বহুসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হবেন। পদোন্নতি প্রায় স্থবির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আরও বলা হয়, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের ১২ থেকে ১৭তম ব্যাচ পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) পদোন্নতির জন্য ৩৪ জন কর্মকর্তা অপেক্ষমাণ। বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় ২০৩০ সাল নাগাদ এসব কর্মকর্তা পদোন্নতিপ্রাপ্ত হবে। বিসিএস ১৭ ব্যাচের কিছু কিছু ক্যাডারের কর্মকর্তা ইতোমধ্যে গ্রেড-২ এ পদোন্নতি পেয়েছেন। তাই পুলিশের গ্রেড-২ এ প্রস্তাবিত ৩৪টি পদে সুপার নিউমারি পদে পদোন্নতি দেওয়া হলে কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তঃক্যাডার সামঞ্জস্যতা বজায় থাকবে। এতে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে উদ্যম ও কর্মস্পৃহা বাড়বে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া চাহিদাপত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নূর-এ-মাহাবুবা জয়া উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে গুরুত্ব বেড়েছে। পাশাপাশি বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে নিয়োগকৃত কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু নিয়োগের তুলনায় পদোন্নতির মাধ্যমে পদ সৃষ্টি তুলনামূলক কম।