গত ৩০ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজশাহী বিভাগ বা জেলার নেতারাই দায়িত্ব পেয়ে আসছেন। কেবল স্থানীয় না হওয়ায় যোগ্যতা সত্ত্বেও শীর্ষ এ দুই পদে আসতে পারছেন না অন্য অঞ্চলের নেতাকর্মীরা। ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রাবি ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনে ফের স্থানীয়রাই নেতৃত্বে আসার গুঞ্জন চলছে। এতে ছাত্রলীগের অন্যান্য অঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, রাবি ছাত্রলীগের শতকরা ৮০ ভাগ নেতাকর্মী রাজশাহী অঞ্চলের বাইরের। এরপরও কেবল রাজশাহী তথা স্থানীয়রাই শীর্ষ দুই পদে প্রাধান্য পাচ্ছেন। ফলে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তাই এবার স্থানীয় ও বাইরের যোগ্যদের নিয়ে শীর্ষ দুই পদে সমন্বয় করা দরকার বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সাল থেকে অদ্যাবধি রাবিতে ছাত্রলীগের ২৫টি কমিটি গঠিত হয়েছে। শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন জেলার নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হলেও ১৯৮৮ সাল থেকে ক্রমেই তা রাজশাহী বিভাগে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৩ সাল থেকে শীর্ষ দুই পদে দায়িত্ব পাওয়া ৬ জন নেতারই বাড়ি রাজশাহী জেলায়। বর্তমান কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি ক্যাম্পাসসংলগ্ন বুধপাড়ায় ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর বাড়ি পবা উপজেলায়। এর আগে ২০১৫ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লবের বাড়ি ক্যাম্পাসসংলগ্ন মেহেরচন্ডি ও কাজলায়। ২০১৩ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান রানার বাড়ি বাগমারায় ও সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের বাড়ি বাঘা উপজেলায়। এছাড়া ২০১০ সালের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপুর বাড়ি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন তালাইমাড়িতে। ১৯৮৮ সালে সাধারণ সম্পাদক হন রাজশাহী নগরীর কাটাখালির শরীফুল ইসলাম শরীফ, ১৯৯২ সালে বাঘা উপজেলার লায়েব উদ্দিন লাভলু, ১৯৯৭ সালে নগরীর পঞ্চবটির আহসানুল হক পিন্টু, ২০০২ সালে আহ্বায়ক হন ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরের কামরুজ্জামান চঞ্চল, ২০০৪ সালে সাধারণ সম্পাদক হন মোহনপুর উপজেলার আয়েন উদ্দিন। ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে পদপ্রার্থীদের বেশিরভাগই ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার। নেতা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা ছাত্রলীগ নেতা কাজী আমিনুল হক লিংকনের বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচন্ডিতে, শাহিনুল ইসলাম সরকার ডনের বাড়ি নগরীর বুধপাড়ায়, মেহেদী হাসান মিশুর বাড়ি নগরীর কাটাখালিতে, আসাদুল্লা-হিল-গালিবের বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন কাজলায়। স্থানীয় এই নেতাদের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। এদিকে রাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবন বৃত্তান্ত দিয়েছেন অন্য জেলাগুলো থেকে আসা নেতাকর্মীরাও। তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক উপ-সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় এবং গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। আসন্ন কমিটির শীর্ষ পদপ্রার্থী ও বর্তমান কমিটির ধর্ম বিষয়ক উপ-সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীই বাইরে থেকে এসে রাজনীতি করছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই শাখায় ছাত্রলীগের রাজনীতিকে গতিশীল রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের জন্য নিরাপদ রাখতে সমন্বয় করাসহ যারা অছাত্র নয়, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়, তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নিয়ে আসা দরকার। আমরা আশা করি আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বিষয়টির সমন্বয় করে যোগ্যদেরই নেতৃত্বে আনবেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বলেন, যারা যোগ্য তারাই নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসবেন। এক্ষেত্রে কার বাড়ি কোথায় সেটা বিবেচিত হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সংগঠন পরিচালনার দক্ষতা রয়েছে এমন নেতৃত্বই আমরা চাই।