জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সারা দেশে জাতীয় পার্টির সংগঠন আছে। এবার আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি খুবই আশাবাদী, যদি ত্রিমুখী লড়াই হয় তাহলে উত্তরবঙ্গের আসনগুলো আমরা অবশ্যই পাব ইনশাআল্লাহ। শনিবার বিকালে লালমনিরহাট রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা মুদ্রার এপিঠে দেখেছি আওয়ামী লীগকে, ওপিঠে দেখেছি বিএনপিকে। আর জাতীয় পার্টিকে মানুষ দেখেছে সুশাসন দিতে। উন্নয়নের শুভসূচনা এই জাতীয় পার্টিকে দিয়ে হয়েছে। আজকে যে রাস্তায় পিচ ঢালা হচ্ছে তা জাতীয় পার্টি করেছে। এরশাদ সাহেবের হাত ধরেই হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সারা দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ লোককে বঞ্চিত করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বৈষম্য তৈরি করেছে। যে বৈষম্যের কারণে আমরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভাইয়ে-ভাইয়ে বৈষম্য তৈরি করছে এই আওয়ামী লীগ। ভাই তার ভাইকে বলছে, তুমি আওয়ামী লীগ? তুমি আওয়ামী লীগ না, তোমাকে কিছু দেওয়া হবে না। জিএম কাদের বলেন, আমি অনেকদিন আগে থেকে বলে আসছি। আমি পার্লামেন্টেও বলেছিলাম যে, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন কয়েম করেছে। আজকে নিউইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশ সম্পর্কে লিখেছে, নীরবে ধ্বংস করা হচ্ছে একটি গণতন্ত্রকে। সেখানে তারা রিপোর্টের ভেতরে বলছে, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি সংশোধন করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বহাল রাখতেই এই আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের এমপিরা সংসদে এর বিরোধিতা করলেও সরকার তা শোনেনি। প্রধান বক্তা হিসাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে এই লুটপাটের হিসাব আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন ডিমের সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না। আমি বলি, যে জনগণের টাকায় মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা চলে সেই জনগণের জন্য যদি সিন্ডিকেট ভাঙা না যায়, তাহলে মন্ত্রী থাকার দরকার কী? আরেক মন্ত্রী তো বলেছিলেন-ভারতের সঙ্গে নাকি তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, এই হলো তাদের অবস্থা। বিএনপির একদফা সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, আপনারা কেমন দল? তা আমরা জানি। আপনাদের আমলে বিদ্যুতের জন্য মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছিল। আপনাদের (বিএনপি) আমলেই দুর্নীতিতে দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, বিএনপির একদফা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট করে তারেক রহমানকে ক্ষমতায় বসানো। আর আওয়ামী লীগের একদফা হলো তারা ক্ষমতায় থেকে ভোট করে আবার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু জনগণের স্পষ্ট কথা হলো-সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জিএম কাদের তথা জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় বসাবে। লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শেরীফা কাদের এমপির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জাহিদ হাসানের পরিচালনায় দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিউ তাজ রহমান এমপি, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াছির, মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল প্রমুখ। পরে দ্বিতীয় অধিবেশনে সবার সম্মতিতে লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসাবে শেরীফা কাদের এমপি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে জাহিদ হাসানের নাম ঘোষণা করেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।