মুন্সীগঞ্জেই উৎপাদিত কপি চার বিক্রি হচ্ছে সারাদেশে।

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ | ১১:১১ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

একমাত্র মুন্সীগঞ্জেই উৎপাদিত হয় উন্নতমানের কপি চারা। যা সারাদেশে বিক্রি হয়ে থাকে। কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে উঠা এ সমস্ত  শীতকালীন সবজি কপির চারা একদিকে যেমন স্থানীয়দের কৃষকদের চাহিদা মিটাচেছ সেই সাথে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে । কপি চারা রোপণের ২১ দিনের মধ্যেই বিক্রির উপযোগী হওয়ায় স্বল্প সময়ে এ ব্যাবসা লাভজনক হওয়ায় এ পেশায় যোগের পর যোগ ধরে টিকে রয়েছে কয়েকশত পরিবার । ভাদ্র মাস আসলেই শুরু হয় এ কপি চারা উৎপাদন যা চলে কার্তিক মাস পর্যন্ত। এখান হতে চারা নিয়ে রোপণ করা কপি চারাগুলো শীত মৌসুমে পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে এই কপি বিক্রি হবে খুচরা বাজারে। মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার প্রায় ১৩.০৫ হেক্টর জমিতে এ বছর চারা উৎপাদন হচ্ছে বলে কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে।সম্প্রতি সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি কপির বীজতলা ঘুরে দেখা গেছে, কপির চারা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কপি চারা চাষিরা। তবে বীজ সংকটে এবার ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। অন্যান্য বছরের তুলনায় বীজের দাম অনেকটা বেশি হওয়ায় হতাশ কপি চারা উৎপাদনকারীরা। কপি চারাকে অতি রোদ ও বৃষ্টি হতে রক্ষার জন্য চারার উপরে ছাউনি দিয়ে চারা ঢেকে দিতে হয়। আবার একটু বৃষ্টিতেই কপি চারা নষ্ট হয়ে যায় তাই  কপি খেতের পাশেই ছোট খুপরি ঘর তৈরি করে ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন চারা উৎপাদনকারীরা।চারা চাষীরা দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে বলেন, মুন্সীগঞ্জে স্থানীয়দের বীজের পাশাপাশি জাপান এবং চীন হতে আসা বীজ দিয়ে কপি চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। দেশি জাতের চেয়ে বিদেশী জাতের কপি চারার চাহিদা অনেক বেশি। তবে এ বছর বীজের দাম অনেক বেশি সবচেয়ে চাহিদার বীজ জাপানি ফ্রেশ এখোন বাজারে নেই বললেই চলে। এককেজি বীজের দাম দেড় লক্ষ টাকা। গতবছর এ বীজের দাম ছিল ৭০,০০০ টাকা।  বিদেশি সমস্ত বীজের  কেজি ৪৫ হাজার টাকা থেকে ১লক্ষ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুন্সীগঞ্জে সাধরানত উৎকৃষ্ট বীজ থেকে চারা উৎপাদন করায় এই চারার মান অনেক ভালো হয়ে থাকে। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার কেপিরবাগ, ভট্টাচার্যের বাগ, দেওয়ানবাজার, রামসিং, কালচি পাড়া, দেওসার , রামপাল, ধলাগাওঁ, সিপাহিপাড়া এলাকায় পাশের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া, আবদুল্লাহপুর, সোনারং টঙ্গিবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় এই চারা উৎপাদিত হয়ে থাকে।সদর উপজেলার কেবিবাগ এলাকার কপিচাষি খলিল (৬৭) দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে  বলেন,অন্যান্য বছর যে পরিমাণ জমিতে চাষ করি এবার তার তিন ভাগের এক ভাগ জমিতে চাষ করছি। বাজারে বীজ পাচ্ছিনা।  বীজের জন্য ঘুরছি অপেক্ষায় আছি জমি তৈরি করে রেখেছি বীজ পেলেই পূর্নদমে চাষাবাদ শুরু করবো।ভট্রাচার্ষেরবাগ গ্রামের চাষি হারুন ঢালি দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে বলেন, এক কেজি জাপানি ফ্রেশ বীজের দাম ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এক পিছ দানার দাম পরে দেড় টাকা। এক কেজি বীজ ভালো গজালে এক লক্ষ চারা হবে। সে হিসাবে একপিস চারার দাম পরে দেড় টাকা। অন্যান্য বছর আমরা সাধারণ ৭০-৮০পয়সায় প্রতি পিছ চারা বিক্রি করতাম। অথচ এ বছর একপিছ চারা উৎপাদন করতে খরচ পরছে দেড় টাকা।দেওয়ান বাজার এলাকার চাষি নাসিরউদ্দিন দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে বলেন, আমার বাবা ৪০ বছর ধরে চারা উৎপাদন করছে। আমি আমার বাবার সাথে এখোন চারা উৎপাদনের কাজ করছি।  আমার বাবা যখন চারা উৎপাদন শুরু করে তখন বীজ সার সরকারীভাবে ফ্রি পেতো। এখোন আমরা টাকা দিয়ে বীজ পাচ্ছি না বীজের অনেক সংকট চলছে। অথচ আমাদের এখান হতেই বাংলাদেশের সব জায়গায় চারা যায়। গাজিপুর, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, সিলেটসহ সব যায়গার লোক আমাদের এখানে চারা নিতে আসে।কেপিরবাগ এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে বলেন, আমাদের এলাকায় সাধারণ ৭৭৭জাতের কপি চাষ বেশি হয়। কিন্তু এ বছর ওই জাতের বীজ পাইতেছি না। বীজের দাম বেশি এজন্য বাইন বন্ধ রাখছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্ধেক জমি চাষের জন্য তৈরি করছি।কপি চারা উৎপাদন  শ্রমিক স্বপন শেখ দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে বলেন, ৩ মাস চারা উৎপাদনের কাজ করি। প্রতিমাসে ২৫,০০০টাকা  বেতনে কাজ করি।  এ কাজে অনেক পরিশ্রম। দিন রাত চারা পর্যাবেক্ষনে রাখতে হয়। রোদ বৃষ্টিতে চারা নষ্ট হয়ে যায়। কেবল সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় চারাকে রোদ খাওয়াতে হয় । বাকি সময় ঢেকে রাখতে হয়।সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসাইন দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে বলেন, শীতকাল সামনে রেখে দেশী জাতের কার্তিকা, আইট্টা, কেটে, ষাইটশা ও চালানি ষাইটশা জাতের কপির চারা উৎপাদন হয় এখানে। অন্যদিকে শীতের শুরুতে তাইওয়ান, জাপানিজ জাতের (হাইব্রিড) কপিচারা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে সিরাজি, হেমাজি, ফ্রেশ, ¯্নাে হোয়াইট, লিনজা।দেশী জাতের দানার তুলনায় বিদেশি জাতের দানার দাম কয়েকগুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদন ব্যয়ও বেশি। অন্যদিকে বিদেশি হাইব্রিড জাতের কপি দেখতে হৃষ্টপুষ্ট হলেও দেশী জাতের কপি খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা ক্রেতা পর্যায়ে বেশি। তিনি বলেন, কপির দানা থেকে চারা উৎপাদনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় আবহাওয়ার তাপমাত্রা ওঠানামা করলে রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ কে বলেন, এই মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় কপিচারাসহ বেগুন টমেটোর চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে এ জেলায় খুব উৎকৃষ্ট মানের কপি চারা উৎপাদন হয় যা সারাদেশে বিক্রি হয়ে থাকে । মূলত এ বছর  আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ১৩.০৫ হেক্টর জমিতে কপিচারাসহ অন্যান্য চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।  এ জেলায় প্রচুর উর্বর কৃষি জমি থাকায় কৃষক সকল মৌসুমেই বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। তবে কপির চারা এটি ‘মুন্সীগঞ্জ স্পেশাল’। দেশের কোথাও এই চারা এমনভাবে তুলতে পারে না। কারণ স্পর্শকাতর এই চারা তোলা এক বিশেষ যোগ্যতা। তাছাড়া মাটি ও আবহাওয়া একটি বিষয়। মাঠকর্মীরা সর্বদা চারা উৎপাদনে কৃষকদের এই ব্যাপারে সুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। বীজের দাম বেশি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর মূলত কৃষকদের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি ও নতুন জাত সম্প্রসারণ নিয়ে বেশি কাজ করে থাকেন। তাছাড়া কৃষকদের ভালো বীজ ও সার ব্যবহার কীটনাশক বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে আমরা বীজের দাম বেশি নিলে বিভিন্ন উপায়ে বীজ বিক্রেতাদের চাপ প্রয়োগ করে থাকি।