সিরাজগঞ্জ যে বয়সে বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে বইখাতা ফেলে গত ১ বছর হল চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে ৪র্থ শ্রেণি পড়ুয়া শিশু সুমাইয়া। সুমাইয়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাঁড়াদহ ইউনিয়নের গাঁড়াদহ বুধবার হাটখোলা এলাকার যক্ষা রোগ আক্রন্ত মো. সায়েম আলী ফকিরের মেয়ে। এ বিষয়ে গাঁড়াদহ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য ইয়াকুব আলী আকন্দ বলেন, গত ১ বছর ধরে যক্ষা রোগে আক্রন্ত হয়ে মো. সায়েম আলী ফকির শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। তার ৪ মেয়ে। এরমধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে\'। সে গার্মেন্টস শ্রমিক স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকে। মেঝ মেয়ে মারা গেছে। ৩য় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ৪র্থ মেয়ে সুমাইয়া পাশের ব্র্যাক স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে।\' ৫ম শ্রেণিতে ওঠার পর গত ১ বছর আগে বাবা মো. সায়েম আলী ফকির কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। অনেক চিকিৎসা করেও ভাল হয় না। এদিকে সংসারে আয় উপার্জনের আর কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় সুমাইয়া স্কুল ছেড়ে তার বাবার চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালানো শুরু করে। গত ৩ মাস আগে তার বাবার যক্ষা রোগ সনাক্ত হয়। শেষ সময়ে রোগ ধরা পড়ায় চিকিৎসা খরচ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সুমাইয়া। এ বিষয়ে সুমাইয়ার বাবা মো. সায়েম আলী ফকির বলেন, আমার কোনো বাড়িঘর নেই। সরকারি খাস জায়গায় এলাকাবাসির দানের টাকায় একটি দোচালা ঘর তুলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকি\'। এর উপর মরণঘাতি যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছি। সংসার চালানোর মত আর কোনো উপায় না থাকায় শিশু মেয়ে সুমাইয়াকে চা বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন।\' এ বিষয়ে গাঁড়াদহ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল মান্নান বলেন, সমাজের সকল বিত্তবান ব্যক্তিদের কে এগিয়ে এসে শিশু সুমাইয়াকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে শিশু সুমাইয়া বলেন, চা বিক্রি না করলে খাব কি। বাবার ওষুধ কিনব কি ভাবে। তাই স্কুল ছেড়ে চায়ের দোকানে চা বিক্রি করি। সারাদিনে ১৫০ থেকে ২০০ কাপ চা বিক্রি করে ২/৩‘শ টাকা আয় হয়। এদিয়ে চাল-ডাল কেনার পর অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি\'। এ ভাবেই গত ১ বছর ধরে চলছে আমাদের অতিকষ্টের সংসার। সে আরো বলে, আমি আবার স্কুলে যেতে চাই। পড়ালেখা করতে চাই। তাই আমাকে বিত্তবানরা আর্থিক সহযোগিতা করলে আমি আবার স্কুলে যেতে পারতাম। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পাড়তাম\'। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের তরফ থেকে সরকারি ভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা যায় করা হবে। বাড়িঘর না থাকলে বাড়িঘরে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সুমাইয়াকে আবারও স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।\'