সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবাসীর সাড়া কম

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩ | ৫:০৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর এক মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল বোববার। প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি স্কিমের আওতায় এ কর্মসূচিতে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এতে করে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কোষাগারে জমা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। তবে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক অনেক কম। প্রবাসীদের আগ্রহী করে তুলতে আরও বেশি প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা দূর করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত চার স্কিমের আওতায় ১২ হাজার ৯৭০ জন প্রথম কিস্তির টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন শেষ করেছেন। তবে প্রথম কিস্তি পরিশোধ করেননি; কিন্তু শুধু নিবন্ধন করেছেন এ সংখ্যা আরও বেশি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিমে সর্বাধিক ৬ হাজার ১৯২ জন প্রথম কিস্তি পরিশোধ করে নিবন্ধন করেছেন। এ ক্ষেত্রে টাকা জমা হয়েছে ৪ কোটি ৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামের স্কিম। কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ৫ হাজার ২০ ব্যক্তি তাদের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করে নিবন্ধন করেছেন। অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’ স্কিমে প্রথম মাসের চাঁদা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৩৬০ জন। তবে প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিমে মাত্র ৩৯৮ জন প্রথম কিস্তি পরিশোধ করে কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী সমকালকে বলেন, এ ধরনের একটি ভালো উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভালো প্রচার হয়নি। এ জন্যই প্রবাসীরা এতে অংশ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তা ছাড়া এ কার্যক্রম নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের মাঝে ইতিবাচক প্রচার দরকার। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রীয় এ স্কিমে অর্থ হারানোর কোনো আশঙ্কা নেই। এদিকে গত শনিবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এ স্কিম থেকে যদি ভালো পরিমাণ টাকা ওঠে, তাহলে সরকার এখান থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন খাতে ব্যয় করবে। তাঁর এ বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, পেনশন তহবিল বিনিয়োগে আলাদা একটি নীতিমালা হচ্ছে। নীতিমালার আওতায় প্রথম দিকে তহবিলের অর্থ সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে। কারণ এটাই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ। এখান থেকে ৮ শতাংশের বেশি সুদও আসবে। বিল ও বন্ড ছেড়েই সরকার ঋণ নিয়ে থাকে। গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ধারণা অনেকের কাছেই নতুন। এটি নিয়ে নানা ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। উদ্বোধনের প্রথম কয়েক দিন আলোচনা থাকলেও এখন তেমন নেই। স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট, যা এ কার্যক্রম সম্প্রসারণে বাধা হিসেবে কাজ করছে। আবার বিভিন্ন সময় নেতিবাচক প্রচারণা দেখা যাচ্ছে। ফলে জনগণকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মানুষকে জানানোর জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নানা উপায় বেছে নিয়েছে। এর অন্যতম গণমাধ্যম। জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে শুরু করে টেলিভিশনে বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে পেনশন স্কিমের ধারণা পরিষ্কার করা হচ্ছে। বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গেও তারা কাজ করছেন। মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকদের যুক্ত করে চেষ্টা করা হচ্ছে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর। গত ১৭ আগস্ট উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা পর একসঙ্গে ১১ থেকে ১২ হাজার মানুষ অনলাইনে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের প্ল্যাটফর্মে ঢোকেন। প্রথম দিনই নিবন্ধন হয় ১ হাজারের বেশি। এক মাসে নিবন্ধনের সংখ্যা এবং অর্থ জমার পরিমাণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট।