মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় ইউনাইটেড ক্লিনিকের ভূল চিকিৎসায় দুই শিশু ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে বাচ্চা জন্মদিতে গিয়ে দুই প্রসূতির মৃত্যূর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে নিহতের স্বজনরা। এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চিন্তিত হয়েছে জনসাধারণ।ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ব্যানিজ্যিক মনোভাবের কারণে এবং একমাত্র ডা: আমেনা আক্তার তানিয়াকে দিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টা করে সিজার অপারেশন করার কারণেই টঙ্গীবাড়ি ইউনাইটেড ক্লিনিকে নবজাতক মৃত্যূর ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মৃত্যের ঘটনার পর ডা: তানিয়ার চিকিৎসার সনদপত্র নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।শুধুমাত্র ক্লিনিকের এমনডির স্ত্রী হওয়ার কারণেই তানিয়ায় ভুল চিকিৎসা করিয়ে হাসপাতালে রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তে এমনি অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এদিকে, টঙ্গীবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে দুই প্রসূতির মৃত্যূও হাসপাতাল কতৃপক্ষের অবহেলার কারনে হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।জানা গেছে, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আউটশাহী গ্রামের মো. হাসানের স্ত্রী প্রসব ব্যাথা উঠলে (১০ সেপ্টেম্বর )রবিবার রাত ১ টার দিকে স্বজনরা তাকে ইউনাইটেড ক্লিনিকে নিয়ে আসে। রাতে তাকে ইনজেকশন পুশ করলে সে অসুস্থ হয়ে পরে। পরেরদিন সকাল ১০ টার দিকে প্রসুতিকে সিজার করে মৃত একটি ছেলে বাচ্চা প্রসাব করান ডা: আমেনা আক্তার তানিয়া।এ ব্যাপারে ওই নবজাতকের দাদা আলি আকবর সেখ বলেন, আমার ছেলের বৌয়ের প্রসব ব্যাথা উঠলে আমরা তাকে রাতে ক্লিনিকে নিয়ে আসি। আসার পর এখানকার ডাক্তার আমার ছেলের বৌকে একটি ইনজেকশন পুস করে। এরপর হতেই আমার ছেলের বৌ অসুস্থ হয়ে পরে। পরেরদিন সকাল ১০ টার দিকে আমার ছেলের বৌকে সিজার করে একটি মৃত ছেলে বাচ্চা প্রসব করায় ডাক্তার।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্লিনিকের ভূল চিকিৎসার কারনেই আমার নাতির মৃত্যূ হয়েছে। আপনারা এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলে কোথায় অভিযোগ করবো? হাসপাতালের লোকজন আমাদের হাতে পায়ে ধরে অনেক আকুতি মিনতি করতেছে আমরা যাতে কোথায়ও অভিযোগ না করি।এদিকে, দুবাই প্রবাসী রুবেল শেখের স্ত্রী রুপালী বেগমের প্রসব ব্যাথা উঠলে তাকে ইউনাইটেল ক্লিনিকে নিয়ে আসে স্বজনরা। পরে গেলো ১১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তাকে সিজার করায় ক্লিনিকের গাইনী ডা: আমেনা আক্তার তানিয়া। পরের দিন ১২ সেপ্টেম্বর ভোরে মারা যায় রুপালীর নবজাতক কন্যা সন্তানটি। সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেও চিকিৎসকদের অবহেলার কারনে নবজাতক সন্তানের মৃত্যূ হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।এদিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ডেলিভারী করাতে এসে দুই প্রসূতির মৃত্যূ হয়েছে। উপজেলার কুরমিড়া গ্রামের রতন হাওলাদারের মেয়ে রিচি বেগমের প্রসব ব্যাথা উঠতে গত শুক্রবার রাতে তাকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে আসে স্বজনরা। এ সময় তাকে নরমাল ডেলিভারী করার জন্য স্যালাইন পুশ করলে বাচ্চা সাথে প্রসূতির নাড়ি-ভূড়িও বের হয়ে আসে দাবী স্বজনদের।নিহতের বোন সিলভানা বলেন, আমার সুস্থ বোনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। যাওয়ার চিকিৎসক নেহেরিকাকে বললাম আমার বোনের নরমাল ডেলিভারী হবে বলেন, না হলে আমরা অন্য কোথায়ও সিজার করাই। কিন্তু সে আমাকে ধমক দিয়ে বলে নরমালেই বাচ্চা হবে বলে, ডেলিভারী করায়। কিন্তু ডেলিভারি করাতে গিয়ে তাদের অবহেলার কারনে আমার বোনের পেটের নারী ছিঁড়ে ফেলে।
পরে অনেক রক্তক্ষরণ শুরু হলে তারা নিজেরাই একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিয়ে আমাদের রোগীকে হাসপাতাল হতে বের করে দেয়ে। আমরা এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ঢাকা নেওয়ার পরে আমার বোন মারা যায়। এদিকে, গেলো রোববার টঙ্গীবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে আরেক প্রসূতি তানিয়া বেগম। তানিয়া উপজেলার দোরাবর্তী গ্রামের কবির সর্দারের স্ত্রী।শিশু মৃত্যূর ঘটনায় ইউনাইটেড ক্লিনিকের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, এক শিশু প্রসূতির গর্ভে মৃত্যু হয়েছে। অপর শিশুটি ঢাকায় নেয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে। আমার স্ত্রী (এমবিবিএস) ডাক্তার।এ বিষয়ে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: প্রনয় মান্না বলেন, আমার জানামতে দুইদিন আগে একজন স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের পরে মারা গেছেন। অপরটি আমার জানা নেই। আর ক্লিনিকের শিশু মৃত্যুের গঠনায় অভিযোগ করলে, বিষয় দেখে ব্যবস্হা নেয়া হবে।