বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। বিএনপির নেতারা অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে রোববার এক সমাবেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতির বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্ত যুক্তভাবে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায়। এখন আইনের যে পরিস্থিতি, তাতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়াকে দেওয়া শর্তযুক্ত মুক্তি আগে বাতিল করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। আইন মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। খালেদা জিয়া ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক ধরনের ঠেলাঠেলি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ঠেলাঠেলি নেই। আমি পরিষ্কার করেছি, যদি কোনো আবেদন আসে সে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। এটিই আইনের বিধান। আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, এর মধ্যে ঠেলাঠেলির কী দেখলেন আপনারা? বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক একটা কথা বলেছেন। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি ঘোষণা আছে। সেখানে বলা আছে, যদি কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হয়, তখন সে দেশের সরকার তাকে বিদেশে পাঠান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের ঘোষণায় এটিও বলা আছে যে, ওই দেশের আইন অগ্রাধিকার পাবে। অর্থাৎ আমাদের দেশের আইনটা অগ্রাধিকার পাবে এবং সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের আইনে যে অবস্থান তাকে ৪০১ ধারায় যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আমি বহুবার বলেছি, আইনের এ অবস্থায় এটার কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আইনের শাসন আছে। আমরা আদালতকে শ্রদ্ধা করি। খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানোর জন্য বিএনপির নেতাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তার শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।