ভূতুড়ে বিলে গ্রাহকের নাভিশ্বাস: বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

প্রকাশিতঃ সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ | ৪:৪৩ অপরাহ্ন
মোঃ রাছেল রানা, প্রধান সম্পাদক

একে তো নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, তার ওপর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল; মোটাদাগে যাকে বলা যায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। সোমবার খবরে প্রকাশ, গত এপ্রিলের পর থেকে অধিকাংশ গ্রাহকের বিল দ্বিগুণের বেশি আসছে। দিন দিন বিলের এই উত্তাপ বেড়েই চলেছে। আগে যাদের বিল গড়ে ১২শ থেকে ১৫শ টাকা আসত, এখন তাদের বিল আসছে সাড়ে ৩ হাজার টাকার বেশি। মে-জুন মাসে কারও কারও এই বিল এসেছিল ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিতরণ কোম্পানিগুলো পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করছে। আবার রাজধানীর অনেক প্রিপেইড মিটার নষ্ট হলেও তা মেরামত করা হচ্ছে না। এ সুযোগে তাদেরও অতিরিক্ত বিল জমা দিতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ভূতুড়ে বিলের অভিযোগ রাজধানী ছাড়িয়ে প্রায় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো চলতি বছর তিন দফায় মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি দাঁড় করালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, সিস্টেম লস কমাতেই গ্রাহকের বিলে বাড়তি বোঝা যোগ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ মিটারে প্রদর্শিত ইউনিটের চেয়ে অতিরিক্ত যোগ করে বিল করে-এ অভিযোগ অনেক দিনের। বিল সমন্বয়ের নিয়ম হচ্ছে, বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করলে প্রতি ইউনিটের মূল্যে তারতম্য ঘটবে। যেমন, প্রথম লাইফ লাইনে অর্থাৎ ০-৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহার করলে ইউনিটপ্রতি দাম হবে ৪.৩৫ টাকা। ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারে দাম হবে ৬.৯৫ টাকা, ৩০১ থেকে ৪০০ পর্যন্ত ব্যবহারে ৭.৩৪ টাকা। এভাবে ষষ্ঠ ধাপ অর্থাৎ ৬০০-এর ঊর্ধ্বে ব্যবহারে ইউনিটপ্রতি দাম হবে ১৩.২৬ টাকা। বিল সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অনেক মিটার রিডার টার্গেট পূরণে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি ইউনিট যোগ করে ধাপ পরিবর্তন করেন বলেও অভিযোগ আছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিলের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার সরকারের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক বিতরণ কোম্পানিগুলো অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তথা ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বিলের কারসাজিতে যখন বৈধ গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন বিদ্যুৎ বিভাগের কারও কারও যোগসাজশে অবৈধ সংযোগ নিয়ে অবাধে এর ব্যবহারও হচ্ছে। ফলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, মেটাতে হচ্ছে ভর্তুকি। মূল্যস্ফীতির এ দুঃসময়ে জনসাধারণের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং এ খাতে অপচয় ও দুর্নীতি কমিয়ে বিদ্যুতের দাম সহনীয় করাটাই কাম্য। বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টির দ্রুত সমাধান করে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাবে, এটাই প্রত্যাশা।