টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট ইতোমধ্যে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। এদিকে হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। পর্যটক টেনে ছাড়ের স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে উলটো তিন থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত হোটেল ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা; যা প্রতারণা হিসেবে দেখছেন তারা। শুক্রবার লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্টের তিন কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত এলাকা রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের এই ঢল আগামী সোমবার পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার থেকে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও কার্নিভাল আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। মেলা উপলক্ষে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ এবং রেস্তোরাঁর পক্ষ থেকে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এসব ছাড়ের প্রলোভনে কক্সবাজারে এসে হতাশ হয়েছেন অনেক পর্যটক। পর্যটকদের অভিযোগ, বিশাল ছাড়ের খবর পেয়ে তারা কক্সবাজার এসেছেন; কিন্তু কোথাও ছাড় দিচ্ছে না। ছাড়ের কথা বললে রুম ভাড়া দিতেই রাজি হচ্ছে না। একই অবস্থা খাবার হোটেলেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারে তারকা মানের হোটেল ছাড়া অন্য কোনো হোটেল বা কটেজ, রিসোর্টগুলোতে রুম ভাড়ার কোনো তালিকা নেই। তবে পর্যটকদের অভিযোগ স্বাভাবিক দামের চেয়ে কয়েকগুণ ভাড়া বেশি নিচ্ছে এসব হোটেল। ঢাকার মালিবাগ থেকে সপরিবারে কক্সবাজারে এসেছেন মো. আবদুল আলিম খান। তিনি অভিযোগ করেন, ওয়ার্ল্ড বিচে একটি অ্যাপার্টমেন্ট দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়ে থাকে; কিন্তু ছাড়ের বদলে উলটো কয়েকগুণ বাড়িয়ে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন কর্তৃপক্ষ। একইভাবে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বিচ ভিউ, স্টার ইকো, সমুদ্র বিলাস, কক্স ওয়েবসহ অনেক হোটেলের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে অ্যাপার্টমেন্টগুলো ইচ্ছেমতো দাম রাখছে বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, কক্সবাজারে যখনই পর্যটকের ঢল নামে হোটেল মালিকরা ইচ্ছেমতো রুমের ভাড়া নিয়ে থাকেন। এবারো সেটা হচ্ছে। ছাড়ের কথা বললেও ভাড়ার তালিকা না থাকার কারণে সেটা কার্যকর করা কঠিন বলে জানান তারা। ছাড়ের কথা বলে পর্যটক টানার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন এসব হোটেল ব্যবসায়ী। যদিও এটি প্রতারণা বলতে নারাজ তারা। ছাড়ের বদলে উলটো কয়েকগুণ দাম বৃদ্ধি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, কক্সবাজারে বিপুল পরির্মাণ পর্যটক এসেছেন। এ সুযোগে ছাড়ের বদলে উলটো রুম ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিম বের হয়েছে। আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে ছাড়ের বদলে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আমরাও শুনেছি। এ কারণে একাধিক জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিম মাঠে নামানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। মেলা উপলক্ষে হোটেল ও মোটেলগুলো ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছিল; কিন্তু পর্যটক বেশি আসার কারণে অনকেই তাদের কথা রাখেনি। তাই যেসব হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাব আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।