প্রধান দুই রাজনৈতিক দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যখন রাজপথে মুখোমুখি, ঠিক তখন নীরবে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি চলতি মাস অক্টোবরেই নিজেদের ঘর গোছানোর কাজটিও শেষ করতে চায় দলটি। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এককভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জোরালোভাবে বলা হলেও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের ভাবনাও উড়িয়ে দিতে নারাজ দলটির নীতিনির্ধারকরা। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে নির্বাচনের আগমুহূর্তে তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে-এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা। জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ-সদস্যদের নিয়ে যৌথ সভার আহ্বান করেছেন দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। বেলা ১১টায় বনানীর পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় রজনীগন্ধায় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, দলের সাংগঠনিক অবস্থার সর্বশেষ চিত্রসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এই বৈঠকে। এছাড়া নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নে কমিটি গঠনসহ আরও বেশকিছু বিষয়ে আলোচনার কথা রয়েছে যৌথ সভায়। ফলে সভাটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি মঙ্গলবার বলেন, আমরা আমাদের কাজ করছি। দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। তিনি আরও বলেন, আপাতত আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য হাতে খুব বেশি সময় নেই। আর নির্বাচন মানেই একটি রাজনৈতিক দলের জন্য সংসদীয় আসনে বিজয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছর ৭ জুন নবাবগঞ্জের বর্ধনপাড়ায় ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন এবং ওই সম্মেলন থেকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি কার্যত তাদের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রস্তুতির বিষয়টিই অপরাপর রাজনৈতিক দলকে জানান দেয়। দলটির নেতাদের মতে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠের বিরোধী দল বিএনপি যখন মুখোমুখি অবস্থানে, ঠিক তখন ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতেই জাতীয় পার্টি দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনি প্রস্তুতিও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এর অংশ হিসাবে ঢাকার পাশাপাশি লালমনিরহাট, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন গত সেপ্টেম্বর মাসে সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৬ অক্টোবর নীলফামারী জেলা, ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর, ১৮ অক্টোবর রাজশাহী জেলা, ১৯ অক্টোবর গাইবান্ধা জেলা, ২১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তর, ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম উত্তর এবং ২৮ অক্টোবর সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতাদের মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি পুরো অক্টোবর মাসটাকেই ঘর গোছানোর কাজে লাগাতে চায় দলটি। সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও সাজানো হয়েছে।