‘দুই সেলফিতেই বাজিমাত, তলে তলে আপস হয়ে গেছে’-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, তলে-তলের কোনো ঘটনা দেশের মুক্তির কারণ হবে না। বুধবার ‘গণতন্ত্র রক্ষায় সুশাসনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তলে-তলে সব ঠিক হয়ে গেছে। আড়ালে আবডালে যেসব জিনিস হয়, সেটি ষড়যন্ত্র। কিছুদিন আগে নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমন কিছু আমরা ভারতকে দিয়েছি, ভারত কখনোই তা ভুলতে পারবে না। কী দিয়েছেন তিনি বলেননি। যেহেতু বলেননি তাহলে সেটি তলে-তলের ব্যাপার। সেজন্য আমি বলি, তলে-তলের কোনো ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তির কারণ হবে না। তলে-তলের ঘটনা সংকট কাটাবে না। তলে-তলের ঘটনা রাজনৈতিক সংকট মীমাংসা করবে না। বিএনপির এই নেতা বলেন, তলে তলে না খেলে প্রকাশ্যে যিনি বাংলাদেশের অহংকার, যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যিনি নির্বাচনে কখনও পরাজিত হননি, তাকে সামান্য চিকিৎসার সুবিধা দিন। তার পছন্দের জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার সুবিধা দিন। হাজী সেলিম, মায়া সাহেবের থেকে নিশ্চয়ই সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বড়, অনেক উঁচু দরের মানুষ। তারা (হাজী সেলিম, মায়া) যদি বিদেশে চিকিৎসা পেতে পারেন, জামিন পেতে পারেন, তাহলে খালেদা জিয়া কেন পাবেন না?’ দেশে কি দুইটি আইন চলছে– প্রশ্ন করে দুদু বলেন, ‘একটি আইন বিরোধী দলের জন্য, আরেকটি সরকারি দলের জন্য। এমন দেশ পৃথিবীর আর কোথাও আছে আমার জানা নেই।’ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নেই উল্লেখ করে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ এক বিচিত্র দেশ। এ দেশ গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে, এক সাগর রক্ত দিয়েছে, লাখ লাখ সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। কিন্তু ৫২ বছর পরে এসেও দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, অধিকার নেই। চাইলেই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া যায় না। কেন্দ্রে গেলেই শুনবেন, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘যে নেত্রী ১৬ টাকার চাল ১০ টাকায় খাওয়াবেন বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এসে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াচ্ছেন। এ কেমন দেশ, যারা অবলীলায় নিজেদের ওয়াদা ভুলে যান, খর্ব করে। এ কেমন দেশ, যেখানে কোনও নিরাপত্তা নেই। আপনি ঘরে থাকেন বা বাইরে, আপনি ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন– এ নিশ্চয়তা নেই।’ দেশ চরম সংকটে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশে ঘোরতর অন্ধকার সময় চলছে। এত খারাপ সময়ে বাংলাদেশ আগে কখনও নিপতিত হয়নি। বাংলাদেশে এখন কথা বলা যায় না। সত্য কথা যদি বলেন, তাহলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তা সে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক যেই হোক। এমনকি তিনি যদি দেশের বাইরেও থাকেন, তাহলেও বিপদে পড়তে পারেন, অর্থাৎ মামলা খেতে পারেন। তার স্বজন যারা দেশে আছেন, তারা গ্রেফতারও হতে পারেন। তাদের মালামাল ক্রোক হতে পারে।’ পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও ছিলেন দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম, কৃষক দলের নেতা রবিউল প্রমুখ। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার আমিনবাজারের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার হুমকি-ধমকি শেষ। এজন্য মির্জা ফখরুলের গলার সুর নরম হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই। অক্টোবরে, নভেম্বরে, ডিসেম্বরে কিছুই হবে না। তিনি আরও বলেন, দিল্লি আছে, আমেরিকারও দিল্লিকে দরকার। আমরা আছি, দিল্লিও আছে। শত্রুতা কারও সঙ্গে নেই। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। শেখ হাসিনা এমন ভারসাম্য সবার সঙ্গে করে ফেলেছেন। ইলেকশন (নির্বাচন) হবে যথাসময়ে। তিনি বলেন, দুই সেলফিতেই বাজিমাত, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা, পুতুল আর জো বাইডেনের সেলফি। এক সেলফি দিল্লিতে আর এক সেলফি নিউইয়র্কে। প্রথমে দিল্লিতে বাজিমাত, তারপর নিউইয়র্কে বাজিমাত। কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসানীতি? তলে তলে আপস হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ স্যাংশন আর ভিসানীতির তোয়াক্কা করে না।