উজান থেকে তিস্তা নদী হয়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ হরপা বান ধেয়ে আসছে। ইতোমধ্যে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে তিস্তা নদী। বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারীর ডালিয়া বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দুপুর ২টা পর থেকে বন্যার পানি ডালিয়া পয়েন্টে প্রবেশ করতে শুরু করে। দুপুর ২টায় তিস্তার পানি ৫১ দশমিক ৯০ মিটার থাকলে ১ ঘণ্টার ব্যবধানে বিকাল ৩টায় ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ১৫ মিটারে। বিকাল ৪টায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও বিকাল ৫টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা পাউবোর। এদিকে ভয়াবহ ঢলের আগাম পূর্বাভাসে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী অববাহিকার চর ও গ্রামে বসবাসকারী মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন মাঠে নেমেছে। অপরদিকে সকাল থেকে এ অঞ্চলে চলছে বৃষ্টিপাত। মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখে নজরদারি করা হচ্ছে। মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে- নদীপাড়ের মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের ফাড বাইপাস এলাকা দিয়ে মানুষজনকে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, তিস্তাপাড়ে বসবাসরতদের দ্রুত সরিয়ে আনার কাজ চলছে। প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবারগুলোকে নিরাপদে নিয়ে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিরাপদ স্থানে আনা হচ্ছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, তিস্তা নদীতে উজান থেকে হরপা বান ধেয়ে আসছে- এমন আগাম খবরে সর্তক অবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নীলফামারীর কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট দিয়ে তিস্তা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাই প্রথম ধাক্কা এ জেলার ওপর দিয়ে আসতে পারে। এজন্য এলাকায় মাইকিংসহ মানুষজনকে সর্তক করে তিস্তা চর ও গ্রাম এলাকা ও বাঁধে বসবাসকারীদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা জানান, ভারতের উত্তর সিকিমে লোনক হ্রদে বৃষ্টির জেরে তিস্তা নদীর পানি প্রবল বেগে ভয়ঙ্করভাবে ঢল নেমে আসছে। ফলে সিকিমের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। হরপা বান বলা হচ্ছে এটিকে। তিনি বলেন, ভারত উজানের জলপাইগুড়ি ও তিস্তা নদীতে লাল সর্তক জারি করেছে। সেই পানি তিস্তা দিয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে বলে ভারতের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আমাদের জানিয়েছে। দুপুরের পর সেই পানি প্রবেশ করবে বাংলাদেশে। এজন্য আমরা সব প্রকার সর্তক অবস্থান নিয়েছি। তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের ফাড বাইপাস দিয়ে মানুষজনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।