অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী রাসু ফের গ্রেফতার

প্রকাশিতঃ অক্টোবর ৯, ২০২৩ | ৮:৩১ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

জামিনের এক সপ্তাহের মাথায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছেন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। ২৬ ডিসেম্বর রাতে তাকে বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বাড্ডা থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করা হয়। তিনি এখন ৫ দিনের রিমান্ডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে আছেন। রিমান্ডে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে চাঞ্চ্যকর তথ্য দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে ডিবির কোনো কর্মকর্তাই প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা অনেক তথ্য দিয়েছেন। ডিবির রিমান্ডে রাসু জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বড় ধরনের সহিংসতার পরিকল্পনা চলছে। এর অংশ হিসাবে আগের সব মামলায় তাকে জামিনে বের করে আনা হয়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা। রাজনীতির মাঠ অস্থির করতে তার নেতৃত্বাধীন গ্রুপ এরই মধ্যে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করেছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে ইতোমধ্যে বিদেশে অবস্থানকারী কয়েকজন টপ টেররের যোগাযোগ হয়েছে তার। বিদেশে আত্মগোপনে থাকা যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশে ফেরার চেষ্টা করছে তাদের মধ্যে রয়েছে মিরপুরের শাহাদত, রামপুরার জিসান, পল্লবীর মোক্তার, বাড্ডার মেহেদি, গুলশানের সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, মোহাম্মদপুরে কালা মনির, শাজাহানপুরের ফ্রিডম মানিক প্রমুখ। ডিবি জানায়, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পেশাদার অপরাধীরা সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র আনছে। দেশের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে আশপাশের অনেক দেশ থেকে অস্ত্র সরবরাহ করছে পলাতক সন্ত্রাসীরা। অত্যাধুনিক ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারা দেশে। কতিপয় রাজনীতিবিদদের হাতেও পৌঁছে গেছে এই অস্ত্র। রাসুর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও একাধিক হত্যা মামলাসহ আগের ১৩টি মামলা আছে। ১২টি মামলায় আগেই তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। ১টি মামলার জামিনের কাগজপত্র ২০ সেপ্টেম্বর কারাগারে পৌঁছে। জামিনের আদেশটি যাচাই করার পর ২১ সেপ্টেম্বর তাকে মুক্তি দেয় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার কর্তৃপক্ষ। ওইদিন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে তিনি কারা অভ্যন্তর থেকে বের হন। ওই সময় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল গেটের সামনে একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোবাস দাঁড়ানো ছিল। রাসু জেল গেট থেকে বের হওয়ার পর সাদা পোশাকের ২-৩ জন ব্যক্তির সঙ্গে হেঁটে মাইক্রোবাসে চড়েন। এরপরই মাইক্রোবাসটি দ্রুতবেগে জেলগেট এলাকা ত্যাগ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী রাসু জামিন পাওয়ার পর আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তার গতিবিধি নজরে রাখছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ডিবি সদস্যরা জানতে পারেন, সহিংস ঘটনা ঘটাতে রাসুর নেতৃত্বে বাড্ডার আফতাবনগরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি লালবাগ বিভাগ কোতোয়ালি জোনাল টিমের লিডার অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইয়াসিন আরাফাতের নেতৃত্বে একটি টিম রাত ১১টার দিকে ডিবি অফিস থেকে আফতাবনগরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। ওই টিমের সদস্যদের মধ্যে আছেন এসআই আফতাবুল ইসলাম, অঞ্জন কুমার তালুকদার, এএসআই বজলুর রহমান, রাজীব বড়ুয়া, নগৌতম কুমার পাল, আবু হানিফা মো. ইমরান, কনস্টেবল দুদুল হোসেন, রাসেদুল হাসান, মামুন আলী প্রমুখ। ডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ডিবি সদস্যরা আফতাবনগরে পৌঁছান। ‘জি’ ব্লকের আড্ডা মোড়ে তিনজন লোককে দেখা যায়। এ সময় দুজন দ্রুত পালিয়ে যান। পালানোর চেষ্টাকালে কাঁধে ছোট ব্যাগ ঝোলানো একজনকে আটক করা হয়। পরে ওই ব্যক্তি জানান, তিনিই শীর্ষ সন্ত্রাসী রাসু। তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে পিস্তল ও গুলি আছে। রাত পৌনে ১টার দিকে তার ব্যাগ থেকে সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোরের একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড তাজা গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেন ডিবির এসআই আফতাবুল ইসলাম। ওই মামলায় আদালতে হাজির করা হলে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৫ অক্টোবর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। আজ তার রিমান্ড শেষ হচ্ছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করার সম্ভাবনা আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত। আপনি এ বিষয়ে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’ তবে মশিউর রহমান বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ডিবির অন্য একটি সূত্র জানায়, রাসুর মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। বাবার নাম মনসুর শেখ ও মায়ের নাম রিজিয়া বেগম। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা আছে। ডিএমপিতেই আছে আটটি মামলা। তার বর্তমান ঠিকানা গুলশানের শাহজাদপুর। মগবাজারের টিএন্ডটি কলোনিতে বেড়ে ওঠা খোরশেদ আলম রাসু ছিলেন ফ্রিডম পার্টির সদস্য। ১৯৮৮ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ফ্রিডম রাসুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি চালায়। ধানমন্ডি, কলাবাগান, মগবাজার, রামপুরা, মালিবাগ ও রমনা এলাকা ফ্রিডম রাসুর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় ‘ফাইভ স্টার’ গ্রুপ গঠন করে।