আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এমআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন রুট নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর গাবতলী থেকে শুরু হয়ে রাসেল য়ার-কাওরানবাজার-হাতিরঝিল-আফতাবনগর দিয়ে দাসেরকান্দি পর্যন্ত এই রুটে মেট্রোরেল তৈরির কথা। কিন্তু কারিগরি প্রকল্প শেষদিকে হলেও মূল প্রকল্পটি অনুমোদনের কোনো খরব নেই। এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরে এটি অনুমোদন না পেলে ঝুঁকিতে পড়বে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বড় অঙ্কের ঋণ সহায়তা। সেই সঙ্গে নানাবিধ জটিলতা তৈরি হবে। এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে একনেক বৈঠক। ফলে প্রকল্পটির দ্রুত অনুমোদন নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে সাউদার্ন রুট নিয়ে পিআইসি (প্রকল্প ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক। তার সামনেই অনিশ্চয়তার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আর মাত্র একটি একনেক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পের প্রস্তাবটিই এখনো আসেনি পরিকল্পনা কমিশনে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে গত ২২ মার্চ সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগে প্রকল্প প্রস্তাবটি পাঠায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ওই বিভাগে গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রজেক্ট স্ক্রুটিনি সভা (পিএসসি)। সেখানে দেওয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ মেনে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করে পুনরায় ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প প্রস্তাবটি সেখানেই প্রক্রিয়াধীন আছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সোমবার বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি এখনো পরিকল্পনা কমিশনেই আসেনি। তাহলে আমার কী করার আছে। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমি এটুকু বলতে পারি আমার কাছে প্রকল্প প্রস্তাব এলে যতটা দ্রুত অনুমোদন করা যায় সেই বিষয়টি দেখব। এটা জাতীয় স্বার্থে করতেই হবে। নির্বাচনের আগে অনুমোদন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, আমি বললাম তো আমার কাছে এলে দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা করব। সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত মোট ১৭ দশমিক ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল তৈরি করা হবে। এর মধ্যে গাবতলী থেকে আফতাবনগর পশ্চিম পর্যন্ত ১৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার মাটির নিচে তৈরি করা হবে। এখানে স্টেশন থাকবে ১১টি। এছাড়া আফতাবনগর সেন্টার থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ৪ দশমিক ১০ কিলামিটার উড়াল লাইন তৈরি হবে। এখানে স্টেশন থাকবে ৪টি। ইতোমধ্যে এই রুটে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে মূল প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে প্রকল্পটির প্রকিউরমেন্ট ডকুমেন্ট প্রিপারেশন (কেনাকাটার দলিল তৈরির প্রস্তুতি) কাজ চলছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ অংশের কাজের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ। কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৪০৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ২৮১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। তবে মূল প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১ হাজার কোটি টাকাই ঋণ দেবে এডিবি। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির সভায় প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব জানান, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) সাউদার্ন রুটের কারিগরি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগ (মূল) প্রকল্পটি অনুমোদন প্রয়োজন। আর যদি সেটি না হয় এবং এডিবির একক বা কো-ফাইন্যান্সিং অর্থায়নে ঋণ নিশ্চিত করা না যায় তাহলে জটিলতার সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে চলমান কারিগরি প্রকল্প এবং বিনিয়োগ প্রকল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হবে না। ফলে বর্তমান প্রকল্পে নিয়োজিত অভিজ্ঞ জনবলও ধরে রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে বর্তমান নিয়োজিত পরামর্শকের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। মূল প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন না হলে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কন্সালটেন্ট নিয়োগ দেওয়াও সম্ভব হবে না। সবকিছু মিলিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল প্রকল্পটি অনুমোদন না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সভায় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এ.কে.এ. শামীম আক্তার বলেন, নির্ধারিত সময়ে ডিপিপি অনুমোদন কিংবা পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া না গেলে কারিগরি প্রকল্পের পরামর্শকের মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। তবে এডিবির একক বা কো-ফাইন্যান্সিংয়ের অর্থায়ন এখন নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে বিনিয়োগ প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এ পর্যায়ে সভার সভাপতি এম.এ.এন. ছিদ্দিক বলেন, বিনিয়োগ প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়নের ব্যবস্থা এডিবির মাধ্যমে করার জন্য গত ২১ জুন ডিএমটিসিএল থেকে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জুলাই সুপারিশসহ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে বিভাগ থেকে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ৯ লাখ ২৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। দাঁড়িয়ে ১৫টি স্টেশন পার হয়ে ৩০ মিনিটে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত যাবে ট্রেন। একটি ট্রেনের সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা হবে ২ হাজার ৩০৮ জন। এডিবির করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী এই রুটে ২০৩০-৩২ অর্থবছরে মোট ২১ কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। বছরে ৪১ দশমিক ২২ হাজার টন জ্বালানি সাশ্রয় হবে। রাস্তার দূরত্ব কমবে বছরে ৬৪২ হাজার কিলোমিটার। ফলে রাস্তায় ১ হাজার ৪৯টি গাড়ির চলাচল কমবে। বায়ুতে ১৬ দশমিক ১৯ হাজার টন সিওটু নিগর্মন কমে যাবে এবং অন্যান্য গ্যাসের নিগর্মন কমবে ৫ দশমিক ৭৩ হাজার টন।ttonmessenger sharing buttonwhatsapp sharing buttontwitter sharing buttonlinkedin sharing button