নতুন আয়কর আইনে জমি বিক্রির মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ মূলধনী কর (গেইন ট্যাক্স) আরোপ করা হয়। করদাতাদের সুবিধার্থে সেই কর বাতিল করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুধু ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা এই সুবিধা পাবেন। কোম্পানি করদাতাদের ক্ষেত্রে গেইন ট্যাক্স দেওয়ার বিধান বহাল থাকছে। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এই মুহূর্তে প্রজ্ঞাপনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পুরোনো আয়কর আইনে ৮২(সি) ধারায় ৬টি খাতের আয়ের বিপরীতে কর্তনকৃত উৎসে করকে চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এগুলো হচ্ছে-সরকার কর্তৃক জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থের বিপরীতে কর্তনকৃত উৎসে কর, সঞ্চয়পত্রের সুদ আয়, রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা, এমপিওভুক্ত স্কুলের এফডিআরের প্রাপ্ত সুদ, জমি বিক্রয়কালে কর্তনকৃত উৎসে কর এবং জমি ডেভেলপারদের সঙ্গে সাইনিং মানির বিপরীতে প্রদত্ত উৎসে কর। নতুন আয়কর আইনে এ ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়। গত ১৬ আগস্ট এ বিষয়ে ‘সঞ্চয়পত্রে বাড়ল করের বোঝা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে পুরোনো আয়কর আইনের ন্যূনতম করের চূড়ান্ত কর দায়ের ধারা বিলুপ্তির কারণে করদাতাদের ওপর কীভাবে করের বোঝা বাড়বে তার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ আগস্ট এনবিআরের সঞ্চয়পত্র ও রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তার ওপর কর্তনকৃত উৎসে করকে চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে জমি বিক্রির কথা উল্লেখ না করায় করদাতাদের ওপর করের বোঝা বহাল রাখা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রফিক সাহেব ১০ বছর আগে রাজধানীর গোড়ানে একটি জমি এক কোটি টাকায় কিনেছিলেন। সেই জমি তিনি চলতি করবর্ষে (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বছরের যে কোনো সময়) ১০ কোটি টাকায় বিক্রি করলেন, অর্থাৎ তিনি মুনাফা (মূলধনী আয়) করলেন ৯ কোটি টাকা। প্রথা অনুযায়ী জমি বিক্রির সময় ক্রেতা দলিল রেজিস্ট্রির সময় অন্যান্য করের (রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প শুল্ক, স্থানীয় সরকার) সঙ্গে ৮ শতাংশ (৮০ লাখ টাকা) উৎসে কর পরিশোধ করেন। নতুন আইনে যেহেতু করদাতার জমি বিক্রির অর্থ রিটার্নে মূলধনী আয় (বিক্রয়ের অর্থ-ক্রয়ের অর্থ) হিসাবে প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে, সেহেতু রফিক সাহেবকে রিটার্নের সঙ্গে (আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জমাকৃত) মূলধনী আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। অর্থাৎ করদাতাকে জমি বিক্রির অর্থের ওপর এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা কর (৯ কোটির ১৫ শতাংশ হিসাবে) দিতে হবে। যেহেতু রেজিস্ট্রির সময় জমি ক্রয়কারী ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে, সেহেতু রিটার্নের সঙ্গে জমি বিক্রয়কারীকে আরও ৫৫ লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। অন্যদিকে অনেকে পৈতৃক সূত্রে জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করেন। এ জাতীয় জমির মূল্য অজানা থাকায় পুরো বিক্রয় মূল্যের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। নতুন আইনে, ব্যক্তি করদাতাদের জমি বিক্রির মূলধনী আয়কে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত, জমি কেনার ৫ বছরের মধ্যে বিক্রি বা হস্তান্তর করলে ব্যক্তি শ্রেণির স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হবে। সে হিসাবে রফিক সাহেবকে প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ ৮২ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। অন্যদিকে ৫ বছর পর জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করলে ১৫ শতাংশ হারে ৫৫ লাখ টাকা গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে ন্যূনতম করের চূড়ান্ত করদায়ের বিধানটি বাতিল করায় প্রান্তিক করদাতাদের ওপর করের বোঝা বাড়বে বলে অনুধাবন করে এনবিআর। অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, নতুন আয়কর আইনে ন্যূনতম করের আওতায় সম্পত্তি হস্তান্তর হতে উৎসে কর কর্তনের বিধানটি পুরোনো আইনের মতো চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচিত না হওয়ায় প্রান্তিক করদাতাদের কর পরিগণনায় অতিরিক্ত করভার সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাড়তি করদায় সৃষ্টি হলে করদাতাদের সামগ্রিকভাবে ব্যয় বাড়বে। চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচিত হলে বাড়তি করদায় সৃষ্টি হতো না। এনবিআর উল্লিখিত প্রজ্ঞাপন জারি হলে জমি বিক্রির সময় গৃহীত উৎসে করকে চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করলে ওই রফিক সাহেবকে বাড়তি কর দিতে হবে না। জমি রেজিস্ট্রির সময় যেই হারে কর আদায় করা হবে, সেটিই করদাতার চূড়ান্ত কর হবে। এতে করের বোঝা লাঘব হবে। শুধু ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা এই সুবিধা পাবেন। তবে কোম্পানি করদাতাদের নতুন আইনের বিধান বহাল থাকবে। সেই মোতাবেক সম্পত্তি হস্তান্তরে মূলধনী আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স দিতে হবে।